শতনারীর আলো জ্বেলে আঁধার ভাঙার শপথ
ডেস্ক রিপোর্ট: শতনারীর আলো জ্বেলে নিয়েছেন ‘আঁধার ভাঙার শপথ’। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রথম প্রহরে রাজধানীর শহীদ মিনারে একত্রিত হয়ে নারীর উপর সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে একাত্ম হয়ে নিয়েছেন শপথ।
গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে ‘আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট’ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্লোগান, বক্তৃতায়, নাচ-গান-মঞ্চনাটকে উঠে এসেছে বাল্য বিয়েসহ নানা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও ‘পুরুষতান্ত্রিক’ নানা প্রতিবন্ধকতার কথা। রাত ১২টা ১ মিনিটে মোমবাতি জ্বালিয়ে কয়েকশ নারী-পুরুষ একসঙ্গে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের শপথ নেন।
রাত ১০টায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. দীপু মনিসহ পাঁচ নারী সাংসদের উপস্থিতিতে সমালোচনা এসেছে সম্প্রতি পাস হওয়া বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন নিয়েও।
প্রতিক্রিয়ায় মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, সমালোচনা থাকলেও বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ে বন্ধ করার জন্য কাজ করছে। বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন নারীর ক্ষমতায়নের রোল মডেল। বিভিন্ন জায়গায় নারীর প্রতিবন্ধকতা, শিক্ষা, দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক মুক্তি- এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আইনের মধ্য দিয়ে আমরা নারীদের সুরক্ষা দিচ্ছি। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, আমরা বাল্যবিয়ে বন্ধ করব। বাল্যবিয়ের কারণ কী- সেগুলো শনাক্ত করে সেই জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের সচেতন হতে হবে। আমরা আইন করেছি, আর আইনের মাধ্যমেই আমরা কন্যা শিশুদেরও সুরক্ষা দেব।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে- থাকবেনা নারী পুরুষে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।
অপরদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপু মনি অভিযোগ করে বলেন, বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনের বিরোধিতাকারীরা সরকারের বিরোধিতার নামে চক্রান্ত করছেন। আইন হয়েছে, এর সঠিক প্রয়োগের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। কিন্তু সরকারের বিরোধিতার নামে যারা চক্রান্ত করছে তাদের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়াশীল চক্রকে প্রতিহত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রতিক্রিয়াশীল চক্র মাথা চাড়া দিচ্ছে। এদের আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিতে পারি না। যে কোনো প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাড়াব। এরা নারীদের অবমাননা করে, করে মানবাধিকার লঙ্ঘনও।
ভাস্কর্য ভাঙার দাবি ও পাঠ্যপুস্তকে ‘সাম্প্রদায়িকীকরণেরও’ সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকার যেন এ ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল চর্চাকে বাড়তে না দেয়।
আয়োজক জোটের সমন্বয়ক জিনাত আরা হক বলেন, গত ৮ বছর ধরে আমরা এ আঁধার ভাঙার শপথ নিয়ে আসছি। কখনো পেট্রোল বোমার আঘাত ছিল, কখনো ছিল ধর্মান্ধতা, আবার কখনো অপবাদ ছিল। সব বাধা অতিক্রম করে প্রতি বছর শহীদ মিনারে আমরা মোমবাতি জ্বালাতে আসি। এটি একটি প্রতীকী আয়োজন। এই শপথ রাতের আঁধার দূর করার না, মনের আঁধার দূর করার।
অন্যদের মধ্যে সংসদ সদস্য নূরসাবা হোসেন, সানজিদা আক্তার, কাজী রোজী, উম্মে কুলসুম স্মৃতি এবং অ্যাডভোকেট নাভানা আক্তারসহ বিভিন্ন নারী অধিকার সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।