অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া কিংবদন্তি নারী নার্গিস : আদালত
আশরাফ চৌধুরী রাজু, সিলেট: সিলেটে কলেজছাত্রী নার্গিস হত্যাচেষ্টা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, এদেশে নারীরা এখন নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া কথিত অন্দরমহলের অবরোধবাসিনী নন। তবে অনেকটা অরক্ষিত। খাদিজার ঘটনা তাই প্রমাণ করে। নারীরা পদেপদে নিগৃহীত, নির্যাতিত, হত্যা ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এজন্য আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ও মানসিকতা দায়ী। গতকাল দুপুরে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা কলেজছাত্রী নার্গিস হত্যা চেষ্টা মামলার রায় প্রদান করেন। চাঞ্চল্যকর এই মামলায় একমাত্র আসামি ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়।
৩০পৃষ্ঠার রায়ে আদালত ‘নার্গিস অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া এক জীবন্ত কিংবদন্তি নারী’ উল্লেখ করে বলেন, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত পাষ- প্রেমিকের চাপাতির নৃশংস আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত খাদিজা দীর্ঘদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মৃত্যুর কাছে হেরে না যাওয়া সমগ্র বিশ্ব নারী সমাজের প্রতিভূ, বিজয়িনী, প্রতিবাদকারিনী। আদালত বলেন, আমার বিশ্বাস আসামির ওপর সর্বোচ্চ শাস্তি আরোপের মাধ্যমে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হাজার হাজার বদরুলরা (উত্যক্তকারীরা) ভবিষ্যতে এমন কা- থেকে বিরত থাকবে এবং নারী সমাজ সুরক্ষিত হবে। ২৮ মিনিটব্যাপী পড়া এই রায় ঘোষণাকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন মামলার একমাত্র আসামি বদরুল আলম।
আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিবসে খাদিজাকে নৃশংস ও বর্বরোচিতভাবে কোপানোর অভিযোগে আসামি বদরুলের যথোপযুক্ত শাস্তি নারীদের সুরক্ষায় তাৎপর্যপূর্ণ ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
রায়ে আরও বলা হয়, মানব-মানবীর মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা চিরন্তন। প্রেম-ভালোবাসায় মিলন, বিরহ থাকবেই। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হলে এমন পৈশাচিক, নৃশংস আচরণ মোটেই কাম্য ও আইন সমর্থিত নয়।
আদালত বলেন, সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে ঘটনার সঙ্গে আসামি বদরুলের সম্পৃক্ততা অবিশ্বাস করার মতো কোনো সাক্ষ্য আমি পাইনি। উপর্যুপরি ১০টি আঘাতের ধরন এবং আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে চাপাতি কিনে আনার ঘটনা প্রমাণ করে, খাদিজাকে খুন করার পরিকল্পনা আসামির ছিল। কাজেই আমি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, রাষ্ট্রপক্ষ আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। সম্পাদনা: এনামুল হক