এস এম নূর মোহাম্মদ: বাংলাদেশের সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনসাধারণের মৌলিক অধিকারসমূহ বলবৎ করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগকে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। আর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির মেয়াদ, শর্তাবলী, বদলি, পদোন্নতি এবং পেনশনসহ অন্যান্য বিষয়ে কোনো আদেশে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে প্রতিকারের জন্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হতে পারবে।
তবে অনেকে এ নিয়ে হাইকোর্টে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করতো। তাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সিভিল আপিল নং ১৫৯/১০ মামলায় কিছু বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া আবেদনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেন। ওই মামলায় আপিল বিভাগ বলেন, চাকরি সংক্রান্ত সকল ও জরুরি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের কর্তৃত্ব রয়েছে এবং ট্রাইব্যুনাল অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা বা স্থগিতাদেশ দিতে পারবেন।
আপিল বিভাগের এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলার সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে মাত্র সাতটি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিপুল সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এছাড়া প্রতিটি বিভাগীয় শহরে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল না থাকায় রাজশাহী, সিলেট, রংপুর এবং ময়মনসিংহে কর্মরত চাকরীজীবীদের অন্য বিভাগে অবস্থিত ট্রাইব্যুনালে গিয়ে প্রতিকার প্রার্থনা করতে হয়। এতে করে প্রতিকার প্রার্থীকে অনেক ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। তাছাড়া এতে প্রতিকার প্রার্র্থীর অনেক সময় এনং অর্থেরও অপচয় হয়।
সব বিষয় বিবেচনা করে রাজশাহী, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে জরুরি ভিত্তিতে চারটি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে চিঠি দেওয়া হয় আইন মন্ত্রণালয়কে। সেইসঙ্গে চারটি জেলা জজের পদসহ প্রয়োজনীয় সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করতে বলা হয় চিঠিতে। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে গত বছরের ২৭ এপ্রিল ওই চিঠি পাঠানো হয়। তবে প্রায় বছর পার হতে চললেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয়।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতটি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ও একটি প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ২৭৭টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় পড়ে আছে। এরমধ্যে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে ৫৫৭টি মামলা। আর ঢাকার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-১ এ ৬৬০, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-২ এ ১৮৬ এবং প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-৩ এ নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে ১৮০টি মামলা। এছাড়া চট্টগ্রামের প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে জমা পড়ে রয়েছে ১২২টি, বগুড়ার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে ৩৮০, খুলনার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে ১৩৮টি এবং বরিশালের প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে ৫৪টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
এসব মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বিচার প্রার্র্থীরা। অনেকেই ফিরতে পারছেন না তাদের কর্মস্থলে। এমনকি পদোন্নতিও আটকে রয়েছে অনেকের।
এদিকে জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল সৃষ্টির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সম্পাদনা: এনামুল হক