সন্ত্রাসবাদ জন্ম দিচ্ছে কারা?
কামরুল আহসান : প্যালাস্টাইনের কয়েকটি স্কুলে ছাত্রদের শেখানো হচ্ছে কীভাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। ইসরাইলের সৈন্যদের কীভাবে হত্যা করতে হবে। আর এসব শেখানো হচ্ছে খেলার ছলে একেবারে হাতেকলমে। দেশপ্রেম জাগ্রত করার নামে তাদের ভিতরে অবচেতনভাবে জন্ম দেয়া হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ।
কিন্তু কথা হচ্ছে কারা আছে এর পেছনে? শুনলে আশ্চর্য্য হবেন। এর পেছনে মদদ দিচ্ছে ব্রিটেন ও ইউরোপের কয়েকটি অনুদানকারী সংস্থা। ডেইলি মেইল অন লাইনের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে সম্প্রতি জানা যায়, প্যালেস্টাইনের প্রায় ২৪টি স্কুলে চলছে এরকম সন্ত্রাসবাদী পাঠদান।
জানা গেছে, ব্রিটেন ও ইউরোপের সাহায্য সংস্থা প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার ঢেলেছে প্যালেস্টাইনের স্কুলগুলোর পেছনে। শিক্ষকরা এখন ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ইসরাইল বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে। সেটা শুধু মানসিক শিক্ষা নয়, একেবারে সামরিক শিক্ষা। নাটকের মধ্য দিয়ে অভিনয় করিয়ে শেখাচ্ছে কীভাবে ইসরাইলের সৈন্যদের ধরে বন্দি করতে হবে, তাদের মারতে হবে।
আর আজ যা নাটক, একদিন তা অনিবার্যভাবেই পরিণত হবে উগ্র জাতীয়তাবাদে। প্যালাস্টাইনের শিশুরা বড় হয়ে যখন সত্যিই ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে যাবে তখন তাদের আখ্যা দেয়া হবে সন্ত্রাসী হিসেবে। আর তা করবে ব্রিটেন, ইউরোপই। যা করা হয়েছে গত অর্ধশতাব্দী জুড়ে।
ব্রিটেনের কারণেই আজ প্যালেস্টাইনের জনগণ নিজ ভূমি থেকে নির্বাসিত। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের কারণে ফিলিস্তিন সীমান্তে ইহুদিরা ঢুকে পড়ে এবং নিজেদের অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। ইসরাইলের আক্রমণের ভয়ে অসংখ্য ফিলিস্তিন নাগরিক দেশ ছেড়ে পালায়। ব্রিটেন ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তা নিয়ে অর্ধশতাব্দী জুড়ে চলছে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ। ফিলিস্তিনি জনগণ নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে সোচ্চার। দিন দিন ইসরাইলিরা দখল করে নিচ্ছে ফিলিস্তিনের ভূমি। ফিলিস্তিনের জনগণ তার প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের বলা হয় সন্ত্রাসী।
দুই স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার ব্যাপারেও কথা হচ্ছে। যুদ্ধ বা সন্ত্রাস নয়, আন্তজার্তিক মহলের সহযোগিতায় আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই এর সমাধান করতে হবে। ইসরাইল ও প্যালেস্টাইনের এই সমস্যাই আজকে জন্ম দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক সমস্যার। বলা হয়, ইসরাইল-প্যালেস্টাইনের সমস্যা সমাধান হলেই মধ্যপ্রাচ্যের অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু, সেই সমস্যা সমাধানের কোনো চেষ্টা না করে পশ্চিমা শক্তিগুলো একটা অরাজক অবস্থাই বিরাজমান রাখতে চায় সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে। তাদের নীতি এখন সবার কাছে স্পষ্ট। কিন্তু, তাদের রাজনৈতিক কূটনীতি শুধু উপর দিক দিয়েই নয়, এখন দেখা যাচ্ছে সংস্কৃতি ও শিক্ষার ভিতর দিয়ে তা আরো অনেক গভীরে প্রথিত। তারা উপরে উপরে সমস্যার সমাধান চায়, কিন্তু, ভিতরে ভিতরে মদদ দিচ্ছে সন্ত্রাসবাদের। দেশপ্রেমের নামে আজকে তারা যে শিশুদের জাতীয়তাবাদে এবং ইসরাইল বিরোধী মনোভাবে গড়ে তুলছে নিশ্চিতভাবেই তারা যখন বড় হয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে যাবে তাদের নাম দিবে সন্ত্রাসী। স্কুলগুলোর দেয়ালে দেয়ালে সাঁটা আছে প্যালাস্টাইনের নিহত শহীদদের ছবি। শিক্ষকরা তাদের উদ্ভুদ্ধ করছেন, আল্লাহর নামে ঝাঁপিয়ে পড়ার। একটি শিশুকে ইসরাইলি সৈন্যদের পোষাক পরিয়ে অন্য শিশুদের প্যালাস্টাইনের মুক্তিসেনা বানিয়ে বলছে তাকে আক্রমণ করার জন্য।
শিশুরা সেসব নাটকের দৃশ্য বুলেটিনের মতো নিজেদের মধ্যে প্রচার করছে, ফেসবুকে পোস্ট করছে। যুদ্ধ তাদের কাছে পরিণত হচ্ছে খেলায়, আর একদিন এই খেলা পরিণত হবে যুদ্ধে। তারা অপরাধী নয়, কিন্তু, তাদের অপরাধী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
প্যালাইস্টাইনের মিডিয়া ওয়াচ পরিচালক ইতামার মার্কাস বলেছেন, এটা পরিস্কার, পরিকল্পনা করেই শিশুদের নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। আর এর দায়ভার সমস্তই ব্রিটেন ও ইউরোপকেই নিতে হবে।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায় এ বছর ব্রিটেন একাই প্রায় ২৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে স্কুলগুলোতে । শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের নামে এইসব অনুদান দেয়া হয়। উপরে উপরে উপকারের ভনিতা থাকলেও ভিতরে ভিতরে থাকে মারাত্মক কুচক্রি পরিকল্পনা। অনেক শিক্ষকও লোভ ও অজ্ঞনতার কারণে স্বীকার হচ্ছে এই সুদূরপ্রসারী চক্রান্তে। তারা বুঝতে পারছে না এটা কি তাদের সত্যিই উপকারে লাগছে নাকি অপকারে! তারা ভাবছে শিশুদের জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমের চেতনায় জাগ্রত করতে পারলে ভালো হবে। কিন্তু, তার আড়ালে যে সন্ত্রাসবাদও জেগে উঠতে পারে সেই খেয়াল অনেকের নেই। তাদের আজ যে খেলনা বন্দুক তুলে দেয়া হয়েছে একদিন হয়তো সে-হাতে উঠে যাবে সত্যিকারের অস্ত্র। আজ তারা পাথর মারছে, একদিন মারবে গুলি। মেইল অনলাইন অবলম্বনে