গণহত্যা দিবস আরও কিছু কথা থাকে বৈকি
অজয় দাশগুপ্ত
এতবছর পর গণহত্যা দিবস পালনের সংবাদটি আমাকে খুব একটা প্রলুব্ধ বা আলোড়িত করেনি। এখন মুক্তিযুদ্ধ এমন এক স্পর্শকাতর বিষয় যা নিয়ে কিছু বলাও বিপজ্জনক। খুব সহজে যেমন কাউকে আমরা চেতনার তকমা পরিয়ে দিই, তেমনি সহজেই বানিয়ে ফেলি রাজাকার।
আমাদের এক বয়োবৃদ্ধ কবি, যিনি এদেশের বড় ছোট সব পুরস্কার পেয়েছেন, না পেলে কেড়ে নিয়েছেন, নালিশ করে কেঁদে-কেটে হলেও বাগিয়েছেন, তিনি তার ধর্মগত পরিচয়ের কারণে নিজেকে স্বাধীনতাবিরোধী আওতার বাইরে মনে করলেও আমাকে রাজাকার বলতে কসুর করেননি। সারাজীবন লেখালেখি আর চিন্তা ও যুক্তির কারণে মালাউন বা ভারতের দালাল গালি শুনতে অভ্যস্ত আমাকেও ছাড় দেননি তিনি। এমন সহ্যও সবুরহীন সময়ে গণহত্যা দিবস নিয়ে কিছু বলাটা তাই নিরবিচ্ছিন্ন সুখের হবে না।
তবু বলি, একাত্তরে ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিস্তৃত নয় মাসে বিরামহীন হত্যা চলেছিল এই দেশে। আসলে কত মানুষ জান হারিয়েছিল সে হিসেব এখনো অজানা। বিএনপি বা জামায়াত এ নিয়ে যত তামাশা করুক বা কূটতর্ক করুক না কেন সে বিভীষিকা ইতিহাসের দগদগে ঘা। তা মানুষের লাশ বা মৃতের সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশ তা মনে রাখলেও মানুষ রাখেনি। আজ চারদিকে যেসব ঘটনা যত বিপদ আর ত্রাস তাতে এটা মনে হয় না চেতনা বলে আসলে কিছু আছে। বরং এটাই দেখি হেফাজত ও নানা নামে চেতনার খুঁটি কফিনের পায়া হতে চলেছে।
যেদেশে সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ একভাবে বাঁচতে পারে না, নানা কারণে মানুষ মরে, লাশ হয়, গুম হয়, সাম্প্রদায়িকতাও সন্ত্রাসের শিকার হয় সেখানে গণহত্যা দিবস কি আসলেই কোনো প্রভাব ফেলবে? তবু আশা রাখি। মনে করি এই সরকার দিবসকে দিবসের বাইরে এনে সঠিক মূল্যায়ন করবে। তা না হলে এটিও একটি দিবসের বাইরে আর কিছু-ই হবে না। লাখো শহিদের আত্মদানের দেশে মাটি ও মানুষই তার প্রহরী। এটা যেন ভুলে না যাই আমরা।
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান