নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ঝুলছে দেড় লাখ মামলা দেড় বছরেও গঠিত হয়নি ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল
এস এম নূর মোহাম্মদ: প্রতিনিয়তই বাড়ছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা। অনেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বিচার পর্যন্ত চাইতে পারেন না। আবার বিচার চাইলেও দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে কেউ কেউ বিচারের আশা ছেড়ে দেন। ফলে নারী শিশু নির্যাতনের বিচার দ্রুত গতিতে করতে ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়ন করে সরকার। বিশেষ এ আইনের অধীনে দায়েরকৃত মামলাগুলোর বিচারের জন্য প্রতিটি জেলা সদরে একটি করে ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে গঠন করা যাবে একাধিক ট্রাইব্যুনালও। বর্তমানে ৫৪টি ট্রাইব্যুনালে সারা দেশে বিচার কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রমতে, অপরাধের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় চলমান ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচার শেষ করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। অধিকাংশ মামলার বিচারই আইনে নির্ধারিত ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ হচ্ছে না। বিচার শেষ করতে পার হচ্ছে বছরের পর বছর। অপরাধের ঘটনা এবং মামলা দায়েরের সংখ্যার কথা চিন্তা করে আদালতের সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করে সুপ্রিম কোর্ট। সারা দেশে আরও ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সৃষ্টির জন্য ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠি পাঠানোর পর প্রায় দেড় বছর পার হতে চললেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের ৪৬ জেলায় ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮২টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৯টি ট্রাইব্যুনালে ৩৯ হাজার ৩০৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগের ৮টি ট্রাইব্যুনালে ৩৬ হাজার ৫৮২টি, রাজশাহী বিভাগের ৮টি ট্রাইব্যুনালে ১৩ হাজার ৮৪১টি, রংপুরের ৬টি ট্রাইব্যুনালে ১৭ হাজার ৮২৭টি, খুলনা বিভাগের ৬টি ট্রাইব্যুনালে ১৬ হাজার ১৮২টি, বরিশাল বিভাগের ৩টি ট্রাইব্যুনালে ৬ হাজার ৫৯টি এবং সিলেট বিভাগের ৪টি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে ১০ হাজার ৮৯৯টি মামলা।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নেই এমন জেলার মধ্যে রয়েছে রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও ভোলা। এসব জেলায় মামলার ভার বহন করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা ও দায়রা জজদের। এই ১৮ জেলায় নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে ১৪ হাজার ৮৯৫টি মামলা। এই জেলাগুলোর মধ্য থেকে রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, পিরোজপুর ও ভোলায় একটি করে ১২টি ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট থেকে।
এছাড়া মামলার সংখ্যার বিবেচনায় ১৭ জেলার মধ্যে ২২টি ট্রাইব্যুনালের পাশাপাশি আরও ২৯টি ট্রাইব্যুনাল সৃৃষ্টি করতে বলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের চিঠিতে। সেগুলো হচ্ছে ঢাকা-১, ২, ৩, ৪, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, চট্টগ্রাম-১, ২, ৩, কক্সবাজার, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর এবং হবিগঞ্জে।
জানা গেছে, বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয় হয়ে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রয়েছে। সেখান থেকে বাকি কাজ সম্পন্ন হলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য যাবে। আর রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। তাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
যদিও গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সরকার সারা দেশে ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করবে।
এছাড়া জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। তারা বাকি কাজ করবে। তবে শুনেছি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছে। আমরা চাই দ্রুত আদালতগুলো গঠন হউক যাতে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা বাড়ে। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি