হুমকি পেয়ে জিডি করেছিলেন থানায় সাবেক স্বামীর ছুরিকাঘাতে রাজধানীতে ব্যাংক কর্মকর্তা খুন
সুজন কৈরী: রাজধানীর কলাবাগানে যমুনা ব্যাংকের পল্টন শাখার নারী এক্সিকিউটিভ আরিফুন্নেছা আরিফাকে (২৭) ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার সাবেক স্বামী সাইখুল ইসলাম রবিনের বিরুদ্ধে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে ধানম-ির সেস্ট্রাল রোডে ওয়েস্টার্ন স্কুলের সামনে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় আরিফাকে। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে রাখা হয়েছে। নিহত আরিফা জামালপুর সদরের মৃত আনিসুজ্জামান হেলালের মেয়ে। তিনি কলাবাগান সেন্ট্রাল রোডের ১৩ নাম্বার ওয়েস্টিন স্টিটের বাসায় মা আফিফা জামানের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন। এক বছর ধরে যমুনা ব্যাংকে এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি সিটি ব্যাংকেও কাজ করেন। এদিকে, এ ঘটনার পরে ঘাতক রবিন তার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক প্রোফাইলে তার লেখা একটি পোস্ট আপ করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘বলেছিলাম বাঁচতে দে. জীবন নষ্ট করিস না…এখন বুঝো ?? কেমন মজা। তোমাকে শেষ করেছি। এবার তোমার বান্ধবীর পালা। অনিক, তানজিনা, শিল্পী, রিয়াদ, পলাশ, মাসুদ দেখা হবে মনে রাখিস। তারাও আমাকে বাঁচতে সহায়তা করেনি। আমার বাঁচার পথ যারা যারা রুদ্ধ করেছে তাদের কাউকে আমি বাঁচতে দিবো না।’ এ বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে বলে জানান আরিফার ভাই আলামিন বুলবুল।
কলাবাগান থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত বলেন, সিসি টিভি ফুটেজে আরিফাকে তার সাবেক স্বামী রবিনের সঙ্গেই বাসায় ঢুকতে ও বের হতে দেখা গেছে। আরিফা খুন হওয়ার স্থানটির সিসি ক্যামেরা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, আরিফা ও রবিন কিছু মালামাল নিয়ে বাসায় ঢুকছে ও বের হচ্ছে। আমাদের ধারণা, বিয়ে বিচ্ছেদের পর তাদের ভেতর ফের ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সিসি ক্যামেরা দেখে এমনটিই মনে হচ্ছে। ওসি বলেন, বাসার সিঁড়ির সামনেই রবিন তাকে হত্যা করেছে। তবে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রবিনকে আটকের জন্য অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। জীবনের নিরাপত্তার জন্য আরিফা থানায় জিডি করেছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, কবে কখন করেছে বিষয়টি আমরা দেখছি।
ঢামেক জরুরী বিভাগের ক্যাজুয়ালটি আবাসিক সার্জন ডা.জেসমিন নাহার জানান, আরিফাকে জরুরী বিভাগে আনার পরে আমরা নিজেরাই অবাক হই। এই রোগী এতক্ষণ বেঁচে আছে কিভাবে? আরিফার হাত-পা, গাল ও গলার ডান পাশে বেশ কয়েকটি কোপের আঘাত রয়েছে। হাত-পায়ের আঘাত বড় না হলেও গলার আঘাতটি বড়। এতে তার শ্বাসনালী ও রক্তনালী কেটে যাওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বেলা ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নিহত আরিফার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তাদের গ্রামের বাড়ি জামালপুর সদরে। আরিফার সাবেক স্বামীর বাড়িও জামালপুরে। একই এলাকায় বাড়ি হওয়ায় দুজনের মধ্যে পরিচয়। এরপর তা গড়ায় প্রেমে। এরই প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সালে পরিবারের অমতে দুজনে বিয়ে করেন। ইডেন কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করার পর আরিফার সিটি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনে চাকরি হয়। তবে বিয়ে ও নতুন চাকরি নিয়ে সংসারে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ কারণে বিয়ের এক মাসের মাথায় দুজনে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেন। দুজন আলাদা থাকলেও রবিন প্রতিদিন আরিফাকে ফোন করতেন এবং বলতেন, তাকে যেনো তালাক দেওয়া না হয়। এজন্য হুমকিও দিতেন। হুমকিতে রবিন বলতেন ‘ডিভোর্স দিলেই তাকে (আরিফাকে) হত্যা করবে’। এসব কথা আরিফার বান্ধবীদেরও জানিয়ে দেন রবিন। এছাড়া অফিসে যাওয়ার সময় বিভিন্নভাবে আরিফার পথ রোধ করতেন রবিন। একপর্যায়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডিও করেন আরিফা।
নিহতের ভাই আলামিন বুলবুল জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় আরিফা অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। কিছু দূর যাওয়ার পরপরই সাবেক স্বামী রবিন তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এরপর আশপাশের লোকজন আরিফাকে উদ্ধার করে সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা পৌনে ১২টায় আরিফা মারা যান। তিনি বলেন, বিয়ের পর রবিন মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তারপর থেকে তার বোন আরিফাকে প্রায়ই মারধর করতো। পরে তিন মাস আগে রবিনকে তালাক দেয় আরিফা। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু