সেমিনারে বক্তারা কোর্ট নয়, বিশেষ সুবিধা দিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে মূলধারায় আনতে হবে
জাফর আহমদ: কোটা দিয়ে চাকরি-বাকরি ও দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া নৃ-গোষ্ঠীকে এগিয়ে আনা সম্ভব নয়। প্রয়োজন বিশেষ ব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়া এ সব জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন। গতকাল রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় যৌথভাবে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।
পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উষ্শী সিং, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুুরী, পিএসসির সচিব মমতাজ আক্তারি, শ্রমিক নেতা চৌধুরী আশিকুল আলম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার রাজা দেবাশিষ রায়।
প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উষ্শী সিং বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার মাধ্যমে রাষ্ট্র যোগ্যকর্মী বানানোর ক্ষেত্রে উল্টো ফল দিতে পারে। অযোগ্য লোক রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে পারে। তখন তিনি রাষ্ট্রের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ জন্য কোটা নয় যোগ্যকর্মী বানানোর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা ও করণীয় নির্ধারণের জন্য সরকারের কাছ থেকে আদায় করতে হবে। এ জন্য সরকারের কাছে বিশেষ বরাদ্দ ও নীতি সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে। তিনি বলেন, পার্বত্য নৃ-গোষ্ঠী ভিক্ষা চায় না, চায় নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় অধিকার ও সুযোগ সুবিধা। মুখ্য সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী বলেন, কোটা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। অনেক ক্ষেত্রে অযোগ্য লোক চলে আসছে। বরং সাধারণ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশের যোগ্য লোক রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসাবে এলে মাঠ পর্যায়ে দেশের মানুষের সেবা করতে পারে। অযোগ্য লোক রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসাবে এলে রাষ্ট্রের পাশাপাশি নিজেরও ক্ষতি করে। তিনি বলেন, বিসিএস এর মতো জায়গায় জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি মিনিমাম লেভেল থাকতে হবে। কোটা থাকলেই সমালোচনা থাকে; প্রত্যন্ত অঞ্চল-পাহাড়, চর ও হাওর-বাঁওড় অঞ্চলে যাতে সকলে শিক্ষার সমান অধিকার ভোগ করতে পারে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, সকল অঞ্চলের সুসম বন্টন ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা চলমান আছে। পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নেও এ কার্যক্রম চলছে। তারই অংশ হিসাবে প্রথমবারের মতো ৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষার নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
‘স্টাডি ফাইন্ডিংস অন জব রিজার্র্ভেশন পলিসিজ ফর ট্রাইবাল পিপলস ইন দ্যা সিভিল সার্ভিস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা পত্রে ব্যারিস্টার রাজা দেবাশিষ রায় উল্লেখ করেন, পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে মূল ধারায় নিয়ে আসতে হলে তাদের বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে পাবলিক সার্ভিসে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে বর্তমান কোটা সিস্টেমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তারপরও রয়েছে ত্রুটি। বিসিএস-এ শেষের ধাপ মৌখিক পরীক্ষাতে কোটা ব্যবস্থার অনুসরণ করা হয়। কিন্তু তার আগেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণ বাদ পড়ে যায়।
তিনি বলেন, শিক্ষার ব্যাপারে সুযোগ বাড়াতে হবে। প্রত্যেক অঞ্চলে শিক্ষার সমান সুযোগ সৃষ্টি হবে। মাতৃভাষায় বাইরে অন্য ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘ড্রপ আউট’ এর হার বৃদ্ধি পায়। বৈষম্য নিরোধ শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সম্পাদনা : তরিকুল ইসলাম সুমন