মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদনÑবাংলা নববর্ষ উদ্যাপন বোনাস হোক সবার
মো. আবদুল কুদ্দুস
বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ। হাজারো সম্ভাবনার দেশ। এই দেশে শতাধিক সামাজিক নিরাপত্তামূলক প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পসমূহ মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে এ কথা অনস্বীকার্য। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হলেও আমাদের দেশের মানুষের দুই ধরনের সংসার বিদ্যমান। একটি নিম্নমধ্যম আয়ের রাষ্ট্রীয় সংসার। অন্যটি নিম্নমধ্যমশ্রেণির বা তার নিচের দিকের মানুষের পারিবারিক সংসার। এই দুটি সংসারের মানুষই শান্তিপূর্র্ণভাবে জীবনযাপনের জন্য নানামুখি সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এসব সংসারের কর্তাব্যক্তি ও সদস্যবৃন্দ পরিবারের ব্যয়ভার সামলানোর জন্য কতগুলো নীতি অনুসরণ করেন। অনুসৃত এসব নীতির মধ্যে কিছু সংখ্যক অদ্ভুতভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। যেমনÑ একজন নিম্নশ্রেণির আয়ের মানুষ ধরে নিলাম যার আয়ের উৎস একটি তিন চাকা বিশিষ্ট ভ্যানগাড়ি। শোবার ঘর নেই। আছে খড়ের বেড়া দিয়ে নির্মিত অস্থায়ী আবাসস্থল। অন্যদিকে নিম্নমধ্যম আয়ের মানুষ যাদের আয়ের উৎস সরকারি চাকরি। কারও ব্যবসা। আবার কারও অন্য কোনো অভিজাত পেশা। যাদের বাড়ি গুলশান, বনানী, বারিধাারার মতো অভিজাত শহর এলাকায়। এই দুশ্রেণির মানুষের মধ্যে একটি বিশেষ মিল হলো আয়ের মাত্রা যেটিই হোক না কেন তাদের কেনাকাটার জায়গা একই। একজন দরিদ্র মানুষ যে বাজার থেকে মাছ কেনেন, সবজি-তরকারি কেনেন, চাল-ডাল কেনেন উচ্চ আয়ের ওই সাহেবরাও মাছসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি কেনাকাটা করেন সেই একই বাজার থেকে, একই হারে দাম দিয়ে। দরিদ্র শ্রেণির মানুষ উচ্চ আয়ের মানুষের হাকা দামের সঙ্গে তাল মেলাতে পারুক বা না পারুক তা দেখবার বিবেক কারও নেই। জীবন সংগ্রামের এ বাজারে সবাই সমান।কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বছরে যদি দুটি বা তিনটি উৎসব ভাতা সরকার কর্তৃক ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করা হয় তবে নিম্নশ্রেণির মানুষ কোনোদিনও এসবের সুফল পাবে না। পাবেন যাদের আলিশান বাড়ি আছে। অথবা আলিশান বাড়িতে যারা ভাড়া থাকেন। সব রকমের বোনাস তাদের জন্য যারা ভ্যানে চড়ে নয় বিএমডব্লিও বা তার চেয়ে বেশি দামি গাড়িতে করে মাছ কিনতে আসে। নিম্ন আয়ের পরিবারের কর্তাকে সরকারকে কর দিয়ে নিজেদের বাজেট তৈরি করতে হয়। তাদের সাহায্য বা অনুদান পাঠাবার জন্য কেউ হাত বাড়িয়ে দেয় না। প্রত্যক্ষ কর বাদে অন্যান্য পরোক্ষ করের দায়ও তাদের মেটাতে হয়। সব দায় মিটিয়ে সামর্থ্য না থাকলে নিত্যদিনের বাজেট কাট করে সংসার চালিয়ে নিতে হয়। পরিবারে একজন কর্তার সংগ্রামী জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সংসার পরিচালকদের সংগ্রামের কষ্ট এত গভীর হয় না। জনগণের কল্যাণ হোক বা না হোক, দেশের উন্নয়ন কাজ হোক বা না হোক তাদের কোনো ক্ষতি নেই। চিন্তা নেই। কারও কাছে জবাবদিহিতার ব্যাপার নেই। সাধারণ জনগণের করের টাকায় বিলাসী জীবনযাপনে কোনো বাধা নেই। রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের অভাব মেটানোর যুদ্ধ পরিসমাপ্তি ঘটে নির্বাচনে জয় পরাজয়ের মাধ্যমে। নির্বাচনে জিতে গেলে একটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত দেশের মানুষের অভাব মেটাতে না পারলেও কারও পদ-পদবি হারিয়ে যায় না। জীবনযুদ্ধের এ সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে সবাই সপুষ্ট হয়। কেউ অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুর মুখে পতিত হয় না। তবে আমাদের দেশের অধিকাংশ নিম্নবিত্তদের মনে কষ্ট রেখে বড়বড় সাহেবদের নববর্ষ উদযাপন ভাতা প্রদান করে বাংলা নববর্ষকে কোনোভাবে কি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত করা যাবে? এ প্রক্রিয়ায় কি বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে পরিণত করা সম্ভব হবে? সরকারি চাকরিজীবীদের পনের থেকে বিশ শতাংশ মানুষের হাতে উৎসব ভাতা তুলে দিয়ে অন্যান্য আশি শতাংশ মানুষের মুখে কি হাসি ফুটবে? (চলবে-১)
লেখক: সহকারী প্রক্টর, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী
সম্পাদনা: আশিক রহমান