এক বছরেও আলোর মুখ দেখল না তনু হত্যা রহস্য : পরিবারে ক্ষোভ- হতাশা
আজাদ হোসেন সুমন: ফোন করলেই বলে দেখছি ‘কি দেখছে ওরা আল্লাই জানে, তদন্তকারী সংস্থা সম্পর্কে এমন করেই বললেন কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু বাবা ইয়ার হোসেন। তিনি তনু হত্যার বিচার নিয়ে সংশয় ও চূড়ান্ত হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ঘটনার পর একাধিকবার তদন্তকারী সংস্থা ও তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হলেও এখনো রহস্যের কোনো সুরাহা হয়নি।
মামলার বাদীর অভিযোগ ও হতাশা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন বলেন, হতাশার কিছু নেই সিআইডির তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক আবদুল কাহার আকন্দ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। গতকাল তনু হত্যার এক বছর পূর্তিতে মা, বাবা, ভাইসহ স্বজনরা তার কবর জিয়ারত করেছে। তনুর নিজ গ্রাম মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুরে পালিত হয় প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে পরিবারের পক্ষ থেকে কুরআন খানি ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
এক বছর পেরিয়ে গেলেও হত্যা রহস্য উদঘাটনের ধারে কাছে যেতে পারেনি তদন্তকারী কর্মকর্তারা। একাধিকবার তদন্তকারী কর্মকর্তা রদবদল করা হয়েছে। লাশ তোলা হয়েছে একাধিকবার। ডিএনএ পরীক্ষার পর মামলা তদন্তকারীরা বিভিন্ন সময় পরস্পরবিরোধী কথা বলে কালক্ষেপণ করেছে। কিন্তু হত্যাকারী কোনো সদস্যকে গ্রেফতার করা তো দূরের কথা, হত্যার মোটিভই এখনো উদঘাটন করতে পারেনি তারা। জানা যায়, গত বছরের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভিতরের একটি জঙ্গল থেকে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘাতকরা ধর্ষণের পর পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তনুকে। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বার্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর গত বছরের ১ এপ্রিলে মামলাটির তদন্তে দায়িত্ব পায় কুমিল্লা সিআইডি। গত বছরের মে’তে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ জনের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল এবং হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে তারা নিশ্চিত হয়েছিল।
দুদফায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তনুর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে না পারায় অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে দেশব্যাপী বহুল আলোচিত এ হত্যাকা-টি। এদিকে দীর্ঘ ১ বছরেও তনু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে না পারা, সামরিক-বেসামরিক অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, দুই দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করতে না পারা, এমনকি ডিএনএ পরীক্ষায় ৩ ধর্ষণকারীর শুক্রাণু পেলেও এ পর্যন্ত ডিএনএ ম্যাচ করে ঘাতকদের শনাক্ত করতে না পারায় এ মামলার ভবিষ্যৎ কিংবা বিচার পাওয়া নিয়ে তনুর পরিবার, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম রোববার মোবাইল ফোনে বলেন, কি আর করুম- মেয়ের জন্য দোয়া করছি। আল্লাহকে ডাকছি। চরম ক্ষোভ আর হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা বুঝে গেছি মেয়ে হত্যার বিচার আমরা পাব না। ফলে বিচার আল্লার কাছেই দিয়ে রাখলাম। তিনি আরও বলেন, তনু হত্যার পেছনে প্রভাবশালীরা জড়িত। নইলে আসামি গ্রেফতার হবে না কেন। তিনি বলেন, থানা না পারলে ডিবি পারবে নইলে সিআইডি পারবে। তনু হত্যার ক্ষেত্রেই অবিচার হলো। তনু হত্যা রহস্য এক বছরেও উদঘাটন না হওয়ায় মিলাদ মাহফিলে আসা তনুর আত্মীয়-স্বজনরা বলছেন, ঘাতকরা ছিল তনুর পরিচিতই। তবুও অদৃশ্য কারণে সবই এখন অচেনা। ধীরে ধীরে এ মামলার কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। তদন্তকারী সংস্থার ধীরগতি দেখে তনুর বাবা-মা ও স্বজনদের ও এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা ক্রমেই বাড়ছে। সম্পাদনা: এনামুল হক