এয়ারলাইন্সগুলোয় মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর বড় ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস হ্যান্ডব্যাগে বহন করতে দেওয়া হচ্ছে না
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: নয়টি এয়ারলাইন্স ও দশটি বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রগামী যাত্রীরা ল্যাপটপ, ট্যাব, ক্যামেরা ও মোবাইল ফোনের চেয়ে বড় সব ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস আর হ্যান্ডব্যাগে ক্যারি করতে পারছেন না। তাদেরকে ওই সব ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী দিতে হচ্ছে লাগেজ ব্যাগে। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট গত মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দরগুলো কার্যকর করেছে। আয়াটা থেকে এয়ারলাইন্সগুলোর প্রধান কার্যালয়ে এই আদেশ জানানো হয়। এরপর এয়ারলাইন্সের তরফ থেকে বিশ্বের যে সব দেশ থেকে যাত্রীরা ওই সব এয়ারলাইন্সে যায় ওই দেশেও তারা আদেশের কপি পাঠিয়েছে। সেই হিসাবে এয়ারলাইন্সগুলো আদেশ কার্যকর করে।
এই আদেশ কার্যকর করা হয়েছে ঢাকাও। ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে বেশিরভাগ যাত্রীরা লাগেজে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে এই সব ডিভাইস অনেকেই দিতে চাইছেন না। কিন্তু আমেরিকায় কোনো যাত্রী ওইসব ডিভাইস হাতে নিয়ে ইমিগ্রেশন পার হতে পারবেন না। কেউ আদেশ অমান্য করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়াসহ যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে তারা। এছাড়া এয়ারলাইন্সগুলোও আদেশ না মানার কারণে সমস্যায় পড়বে। এমনকি তাদের সেখানে ফ্লাইট চালানোর ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে পারে। আয়াটাও ব্যবস্থা নিতে পারবে। এইসব বিভিন্ন দিক বিবেচনা করেই যেসব এয়ারলাইন্সে হ্যান্ডব্যাগে ওই সব ডিভাইস ক্যারি করা যাবে না বলে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তরফ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা কার্যকর করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে ৯৬ ঘণ্টা সময় বেঁেধ দেওয়া হয়েছিল এটি কার্যকর করার জন্য। সেই সময়ের আগেই এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো আদেশ কার্যকর করে।
গত মঙ্গলবার রাত থেকেই বাংলাদেশ থেকে যেসব এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে তারা হ্যান্ডব্যাগে ল্যাপটপ, ট্যাবসহ অন্যান্য বড় ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নিতে দিচ্ছে না।
নিষেধাজ্ঞার আওতার মধ্যে রয়েছে, টার্কিশ এয়ারওয়াজে, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স, কুয়েত এয়ারওয়েজ, কাতার এয়ারওয়েজ, এ্যামিরেটস ও ইতিহাদ এয়ারওয়েজ। তারা ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটে ওঠার আগেই লাগেজে ওই সব ডিভাইস দিচ্ছেন না। সেই সঙ্গে এয়ারলাইন্স পরামর্শ দিচ্ছে যাতে করে যাত্রীরা খুব ভাল করে একাধিক তালা লাগিয়ে লাগেজে দেন। সেই সঙ্গে ভঙ্গুর জিনিস রয়েছে স্টিকার লাগিয়ে দেন। তাহলে সাবধানে পরিবহন করা হবে, এমন নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে।
এ্যামিরেটসের ঢাকা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তাদের ওখান থেকে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অর্ডার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি আমাদের এয়ারলাইন্সের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আমাদেরকে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকেই আমরা এটি কার্যকর করেছি। তবে যারা সরাসরি লাগেজে আমেরিকায় গিয়ে নিবেন তাদেরকে ঢাকা থেকেই লাগেজে দিতে হচ্ছে। যারা দুবাই গিয়ে লাগেজ নিবেন আবার সেখানে চেকইন করবেন তাদেরকে হাতে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তখন লাগেজ দেওয়া হচ্ছে দুবাই পর্যন্ত। সেখান থেকে আমেরিকার ফ্লাইটে তাকে হাতে নিতে দেওয়া হবে না। লাগেজে নিতে হবে।
সেখানকার একজন কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীরা অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরা তাদেরকে আশ্বস্ত করছি। তবে অনেকেই ভেঙে যাওয়ার ভয়ে দিতে চান না। কেউ কেউ আবার নিচ্ছেন না। তবে আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে সাবধানে বহন করা হবে। কোনো সমস্যা হবে না। ভাল করে তালা মেরে দিতে হবে।
এদিকে কুয়েত এয়ারওয়েজের ঢাকা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার একজন কর্মকর্তা বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর আয়াটা থেকে এই আদেশ সব এয়ারলাইন্সের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেই আদেশ আমাদের কাছেও এসেছে। সেই সঙ্গে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও এই ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেইভাবে কার্যকর করছি। মঙ্গলবার রাত থেকেই অর্ডার কার্যকর করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের এয়ারলাইন্সে যাত্রীদের ঢাকা থেকেই মোবাইল ফোন ছাড়া সব ধরনের ডিভাইস লাগেজে দিতে হবে। অন্য কোনোভাবে নেওয়া যাবে না। আর এখান থেকে হাতে নিবেন বা ব্যাগে নিবেন। কুয়েতে গিয়ে লাগেজে দিবেন এই সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। যাত্রীদের ঢাকা থেকেই সব ডিভাইস লাগেজে দিতে হচ্ছে।
যাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা বলেন, এখানে আমাদের করার কিছু নেই। এটা তো দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এটা সবাইকে মানতে হবে। তারা বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিবেন বলেও আশা করছি।
নিরাপত্তাজনিত কারণে নাকি অন্য কোনো কারণে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এমন কিছু তাদেরকে আয়াটা কিংবা এয়ারলাইন্সের প্রদান কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে তারা বলেন, এই রকম কোনো কারণ জানানো হয়নি।
যেসব এয়ারলাইন্সে মোবাইল ছাড়া অন্য কোনো ডিভাইস এয়ারলাইন্সে হাতে ও হাতব্যাগে বহন করা যাবে না বলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রয়েছে, রয়্যাল জর্ডানিয়ান, ইজিপ্ট এয়ার, টার্কিশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স, কুয়েত এয়ারওয়েজ, রয়াল এয়ার মারোক, কাতার এয়ারওয়েজ, এ্যামিরেটস ও ইতিহাদ এয়ারওয়েজ।
এদিকে দশটি মুসলিম দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী যাত্রীরা বিমানের কেবিনে তাদের সঙ্গে ল্যাপটপ, ট্যাব, ক্যামেরা বা এ রকম বড় ইলেকট্রনিক যন্ত্র বহন করতে পারছেন না। এইসব ইলেকট্রনিক যন্ত্র বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। বিবিসিকে ওই ডিপার্টমেন্ট বলেছে, চরমপন্থিরা উড়ন্ত জেট বিমান উড়িয়ে দেওয়ার জন্য আরও নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। ল্যাপটপ, ট্যাব, ক্যামেরা, ডিভিডি প্লেয়ার বা ইলেকট্রনিক গেমস কনসোলের মধ্যে বোমা লুকিয়ে রাখা সম্ভব। সে কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে মোবাইল ফোনকে এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের নয় দেশের দশ বিমানবন্দর থেকে যেসব ফ্লাইট যুক্তরাষ্ট্রে যায় সেগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। কেবিন লাগেজে বা যাত্রীর সঙ্গে এ ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্র রাখা না গেলেও চেক ইন করা বড় লাগেজে তা নেওয়া যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব এয়ারলাইন্সকে ৯৬ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে এ ধরনের যন্ত্র ফ্লাইটে নিষিদ্ধ করার জন্য। কতদিনের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো তা উল্লেখ করা হয়নি। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট তাদের এক বিবৃতিতে বলেছে, সন্ত্রাসবাদীরা যেভাবে বাণিজ্যিক বিমান পরিবহনকে টার্গেট করে হামলার চেষ্টা করছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার উদ্বিগ্ন।
যে দশটি বিমানবন্দর নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে এর মধ্যে রয়েছে, যেসব বিমানবন্দর এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, কুইন আলিয়া ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, আম্মান, জর্ডান, কায়রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, মিশর,আতাতুর্ক এয়ারপোর্ট, ইস্তানবুল, তুরস্ক, কুয়েত ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, কুয়েত, মোহাম্মদ ফাইভ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, ক্যাসাবলংকা, মরক্কো, হামাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, দোহা, কাতার, দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আবুধাবী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, সংযুক্ত আরব আমিরাত।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দুবাইভিত্তিক একটি এয়ারলাইন্সের বিমান সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে উড্ডয়নের পরপরই সেখানে বিস্ফোরণ হয়। তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, একজন যাত্রী একটি ল্যাপটপের মধ্যে বোমা বহন করছিল। সে বোমার বিস্ফোরণ হয়। সে বিস্ফোরণের পর পাইলট দক্ষতার সঙ্গে বিমানটি অবতরণ করাতে সক্ষম হন। তবে বিমানটি যদি মাঝ আকাশে থাকত সেক্ষেত্রে বিমানটি ধ্বংস হয়ে যেতে পারত বলে মনে করেন তদন্তকারীরা। জঙ্গিগোষ্ঠী আল-শাবাব সে ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল।
বিবিসি বলছে, মার্কিন সরকার বলছে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো যাত্রীবাহী বিমানকে ইদানিং অনেক বেশি টার্গেট করছে বলে তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র শন স্পাইসার বলছেন, গোয়েন্দাদের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বাণিজ্যিক বিমানগুলোকে টার্গেট করতে নানা রকম নতুন উদ্ভাবনী কায়দা ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সম্পাদনা: শিমুল মাহমুদ