ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলায় হামলায় ১৩ বছর পর সাজা
এস এম নূর মোহাম্মদ : সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসিতে ঝুলতে হচ্ছে মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গিকে। ২০০৪ সালের ২১ মে ওই হামলা চালানো হয়। হামলায় তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন।
ঘটনার দিন অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র প্রদান করা হলে ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই মুফতি হান্নানসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর সম্পুরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালের নাম অন্তর্ভুক্ত করে অভিযোগ গঠন করা হয়।
২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদ-াদেশ দেন। অন্যদিকে মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ এবং মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয়।
নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদ-াদেশ অনুমোদন করতে প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি ২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপিলও করেন। প্রায় সাত বছর পর ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি এ মামলায় হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয় ৩ ফেব্রুয়ারি। পরে বিচারিক আদালতের দ- বহাল রেখে ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একই বছর ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।
পরে একই বছর ১৩ জুলাই হাইকোর্টে দেওয়া মৃত্যুদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেন মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল। তাদের সঙ্গে আদালত মৃত্যুদ-প্রাপ্ত অপর আসামি দেলোয়ার হোসেন রিপনের পক্ষে আইনজীবী নিযুক্ত করে একই সঙ্গে তিনজনের আপিল শুনেন আপিল বিভাগ।
গত বছর ১৫ নভেম্বর এই মামলায় হাইকোর্টে মৃত্যুদ- বহাল থাকা মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আপিল বিভাগ। সেই আপিল শুনানি গত বছরের ৩০ নভেম্বর শুরু হয়। শুনানি শেষ হয় ৬ ডিসেম্বর। শুনানি শেষে ৭ ডিসেম্বর তিনজনের মৃত্যুদ-ই বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের ৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় এ বছরের ১৮ জানুয়ারি। আপিল বিভাগের এ রায় যাওয়ার পর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন বিচারিক আদালত। গত ৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছালে এ পরোয়ানা মৃত্যুদ-প্রাপ্তদের পড়ে শোনানো হয়।
এর পর সর্বশেষ আইনী সুযোগ হিসেবে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিলে বহাল থাকা মৃত্যুদ-ের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করেন মুফতি হান্নানসহ তিন আসামি। শুনানি শেষে গত ১৯ মার্চ ওই রিভিউ খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ। এরপর ২১ মার্চ ওই রিভিউ আবেদন খারিজের রায় প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। এখন সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ রয়েছে তিন আসামির। সম্পাদনা: এনামুল হক