নির্বাচনি প্রচারণায় সম-অধিকারের দাবি জানালেন মির্জা ফখরুল
শাহানুজ্জামান টিটু: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করলেও এই অধিকার থেকে বিএনপিকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন। বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এর আয়োজন করে ‘ওবায়দুর রহমান স্মৃতি সংসদ’। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রচারণায় সম-অধিকারের দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। ওনারা সমাবেশ করবেন আর আমরা ঘরের মধ্যে ক্লোজড ডোর মিটিং করতে পারব না। তার জন্য অনুমতি নিতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন করবেন ভালো কথা, এর জন্য আগে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সভা-সমাবেশ করার মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। তাহলে নির্বাচন হবে, না হলে নির্বাচন হবে না। বর্তমান অবস্থা রেখে কোনো নির্বাচন হবে না এবং সেই নির্বাচন দেশবাসী মেনে নেবে না। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন চায় জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সেটি অবশ্যই নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের একটি নির্বাচন হতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার নতুন একটা সুর তুলেছে জঙ্গিবাদ। বিএনপি না কি জঙ্গিবাদের উসকানি দিচ্ছে। অথচ জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে কিভাবে সেটি তারা খুঁজে বের করছেন না। যাদের এই অভিযোগে ধরা হচ্ছে তাদের তো মেরে দিচ্ছেন। কোনো তদন্ত নেই।
এর আগে সকালে রাজধানী শেরে বাংলা চন্দ্রিমা উদ্যানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ফলপ্রসূ করতে হলে তিস্তা চুক্তির সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমরা ৫৪টি নদীর কোনো ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছি না। তিস্তার পানি চুক্তি যদি না হয়, তাহলে অন্য চুক্তি অর্থহীন হবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কোনো চুক্তি দেশের মানুষ মেনে নেবে না বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কী, হবে না’ সেই বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। তিনি বলেন, আমরা দর কষাকষি করতে পারছি না। তাই আমরা নতজানু হয়ে আছি। বাংলাদেশে যারা সরকার চালাচ্ছেন, যারা দরকষাকষি করছেন, তারা আগেই দুর্বল হয়ে নতজানু হয়ে আছেন। তারা বাংলাদেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে অন্য দেশের স্বার্থকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন- বলেন ফখরুল। ‘বিভিন্ন জনসভায় নৌকা প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী- এর তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে ঘরে বন্দী রেখে নিজের দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে একতরফা নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন। এটাই প্রমাণ করে, দেশে গণতন্ত্র নেই। একটি দল এবং তার সভাপতি তিনি রাষ্ট্রের পয়সায় হেলিকপ্টারে করে জনসভায় যাচ্ছেন, জনসভা এবং ক্যাম্পেইন করছেন। তিনি গায়ের জোরে একতরফা ক্যাম্পেইন করছেন। বগুড়া, চট্টগ্রাম ও মাগুরায় প্রধানমন্ত্রীর নৌকায় ভোট চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে নির্বাচনটা অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে। জিয়া পরিষদের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অপর এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করছে। জঙ্গিবাদের প্রচারণা চালিয়ে বাংলাদেশকে জঙ্গি দেশে পরিণত করতে চাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ‘র’-এর মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল- প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রায় ভিত্তিহীন কথা বলেন। এটা তার স্বভাবে পরিণত হয়েছে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অসত্য, মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনি কী প্রমাণ করতে চাচ্ছেন, ভারতের ‘র’ এবং আমেরিকার মাধ্যমে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু দেশের মানুষ দেখেছে ২০০১ সালে নির্বাচন ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু। আর ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আপনাদের ১৫৪টা প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। তাহলে কি আপনারা ভারতের ‘র’ এবং আমেরিকার মাধ্যমে ক্ষমতায় বসে আছেন। এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। এ সময় জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান কবীর মুরাদসহ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদনা: শিমুল মাহমুদ