হাইকোর্টে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
এস এম নূর মোহাম্মদ : বাংলাদেশে মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ার থেকে নিঃসৃত রেডিয়েশনের মাত্রা উচ্চ পর্যায়ের। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া প্রতিবেদনে এসব কথা জানানো হয়। গতকাল ওই প্রতিবেদন বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী জিনাত হক। পরে আদালত হলফনামা আকারে তা দাখিল করতে নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২৮ মার্চ দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আদালতের নির্দেশে সরেজমিন পরিদর্শন ও পর্যালোচনার পর এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি তিনটি সুপারিশ পাঠায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। ওই সুপারিশে বলা হয়Ñ (ক) সাব কমিটি বিকিরণ পরিমাপকালে একটি মোবাইল অপারেটর বেস ট্রান্সিভার স্টেশন (বিটিএস)-এ মাত্রাতিরিক্ত বিকিরণ পেয়েছে। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৬টি অপারেটর কর্তৃক স্থাপিত বিটিএস সমূহ পরীক্ষাপূর্বক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত নিরাপদ মাত্রার মধ্যে বিকিরণ নামিয়ে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিটিআরসিকে বলা যেতে পারে।
(খ) নিয়মিতভাবে সকল মোবাইল ফোন অপারেটরের বিটিএস-এর বিকিরণ মনিটরিং করার জন্য বিটিআরসিকে বলা যেতে পারে। এবং (গ) বিটিএস স্থাপন ও এর টাওয়ার থেকে বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নীতিমালা বা গাইডলাইন অতিসত্বর প্রণয়ন করার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসিকে বলা যেতে পারে।
এর আগে পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) মোবাইল ফোন টাওয়ারের রেডিয়েশন নিঃসরণ নিয়ে ২০১২ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। সে সময় শুনানি শেষে আদালত রেডিয়েশনের মাত্রা এবং এর স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন। আর বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির কয়েকটি মোবাইল ফোন টাওয়ার পরিদর্শন করে রেডিয়েশন বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
সেইসঙ্গে সাতদিনের মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করতে স্বাস্থ্য সচিবকে নির্দেশ দেন আদালত। ওই কমিটিতে বিজ্ঞানী, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অধ্যাপক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং আণবিক শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিসহ সাতজন সদস্য রাখতে বলা হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারগুলো থেকে নিঃসৃত রেডিয়েশন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন হাইকোর্ট।
উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি পৃথক একটি সাব কমিটি গঠন করে। এ সাব কমিটি ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই প্রতিবেদন দেয় বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে। পরে বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার ওই প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। গতকাল আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। সম্পাদনা: এনামুল হক