‘বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ ২৫ মার্চ পর্যন্ত টেলিভিশন ও বেতার দখলে রেখেছিল’
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: ১৯৭১ সালের ৮ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত শিল্পীরা জেনারেল ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনীর নাকের ডগায় বসেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে অসাধারণ সব অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছিল। যা মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক সৈয়দ হাসান ইমাম এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসহযোগের ঘোষণা দেয়ায় বিক্ষুদ্ধ শিল্পী সমাজ ১ মার্চ থেকেই বেতার ও টিভির অনুষ্ঠান বর্জন করতে শুরু করে। এ বর্জন এতটাই সর্বাত্মক হয়েছিল যে, পাকিস্তানিরা বেতার-টিভি চালাতে পারছিল না। হাসান ইমাম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশেই বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ টেলিভিশন ও বেতার নিজেদের দখলে রেখেছিল। কারণ সে সময় অনুষ্ঠান রেকর্ডিংয়ের কোনো সুযোগ ছিল না বলে সব অনুষ্ঠানই সরাসরি সম্প্রচার করা হতো। এতে তৎকালীন পাকিস্তানি বেতার ও টিভি কর্তৃপক্ষকে বড় ধরনের ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল। এই সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান গণপরিষদের সভা স্থগিত ঘোষণা করলেই শুরু হয় বিক্ষোভ। ওই দিনই পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগের ডাক দিয়ে ৭ মার্চের জনসভা থেকে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হয়। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে কিছু দিক নির্দেশনা দেন এবং বেতার-টিভি খোলা থাকবে বলেও ঘোষণা দেন। ওই ভাষণের পর সন্ধ্যায় শিল্পী সমাজের পক্ষে তিনি, ওহিদুল হক, আতিকুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা ও হাফিজসহ তাদের একটি গ্রুপ বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসায় গিয়ে জানতে চান, বেতার-টিভির অনুষ্ঠানে তারা যোগদান করবেন কি না? বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন, গণমাধ্যম দুটি অসহযোগের বাইরে থাকবে, তা না হলে বেতার-টিভিও অসহযোগের আওতায় পড়বে।
এই সময় বঙ্গবন্ধু তৎকালীন তথ্যসচিব জহুরুল হককে ফোন করেন এবং বলেন, আমার ছেলেদের পাঠাচ্ছি, ওদের কথা মতো যদি বেতার-টিভি চালান তাহলে তা অসহযোগের বাইরে থাকবে, তা না হলে গণমাধ্যম দুটিও অসহযোগের আওতায় পড়বে।
সেদিন বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাদের দলটি জহুরুল হকের বাসায় যান। সচিব তাদের বসিয়ে রাওয়াল পিন্ডির সঙ্গে কথা বলেন এবং জানান, দুটি শর্ত মানলে তাদের (শিল্পীদের) হাতে বেতার-টিভির দায়িত্ব দিতে পারেন। একটা হলো পাকিস্তানের অখ-তা এবং অন্যটি হলো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কিছু বলা ও প্রচার করা যাবে না। তারা সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে ফোন করে শর্ত দুটির কথা জানান। তখন বঙ্গবন্ধু তাদের বলেন, আপাতত শর্ত দুটি মেনে বেতার-টিভি দখল কর। তখনই শিল্পীরা ‘বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ’ নামে সংগঠনের নাম নিয়ে দুটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। এ কমিটি ৮ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠান প্রচার হয় বলে জানান হাসান ইমাম।