জঙ্গিবাদে অস্ত্র-অর্থ-উৎসাহদাতাদের খতিয়ে দেখার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর
ডেস্ক রিপোর্ট: জঙ্গিবাদে কারা অস্ত্র, অর্থ ও উৎসাহ দিচ্ছে- তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অনেক উন্নত দেশে পড়াশোনা করতে গিয়ে উল্টো এ ধরনের জঙ্গিবাদের পথে চলে যাচ্ছে। আমাদের দেশেও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এখানে কথা হচ্ছে, কারা এদের হাতে অস্ত্র দিচ্ছে? কারা এদের টাকা দিচ্ছে? কারা এদের উৎসাহিত করছে? গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। ২০১৩-১৪ সালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভালো ফলাফলের জন্য ২৩৩ জনকে এই পদক দেওয়া হয়।
এ সময় উচ্চবিত্ত, ইংরেজি মাধ্যম এমনকি বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়া ছেলে-মেয়েদের জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। শিক্ষার্থীদের উগ্রবাদের পথ থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সব থেকে আমি অবাক হয়ে যাই, সেটা হলো মেধাবী, শিক্ষিত, উচ্চবিত্ত ছেলে-মেয়েরা কীভাবে ধর্মান্ধ হয়ে যায়, আর কীভাবে জঙ্গিবাদের পথে যায়, সেটা আমার কাছে বোধগম্য না।
জঙ্গিবাদের থাবা থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত রাখতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদেরকে দেশকে ভালোবাসতে হবে এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। এসব না করে তারা যেন বিপথে চলে না যায়, সে জন্য শিক্ষক এবং অভিভাবকদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
জঙ্গিদের বেশকিছু নাশকতার ঘটনা ও আত্মঘাতী হামলার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ধর্ম ইসলাম শান্তির ধর্ম, এখানে কখনও বলেনি যে, নিরীহ মানুষ হত্যা কর। আর নিরীহ মানুষ হত্যা করে বেহেশতে চলে যাবে, এটা কী করে হয়। আমাদের ইসলাম ধর্ম এমনিতেই বলে আত্মহত্যা মহাপাপ। সে মহাপাপের পথে কী করে যায় ধর্মের নামে? তিনি বলেন, উগ্রবাদ যে ধ্বংস এনে দেয়, পবিত্র ধর্ম ইসলামের নামটাই যে তারা বদনাম করে দিচ্ছে, সেটা তারা বোঝে কি না জানি না। কিন্তু এই ধরনের বিপথে কেন যায়। এই বিপথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
ছেলে-মেয়েদেরকে উগ্রবাদ থেকে ফিরিয়ে আনতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার পড়াশোনা, খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা ও উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। যেন তাদের মেধাগুলো বিপথে না যায়, তাদের জীবনটাই না আবার নষ্ট হয়ে যায়। আত্মহননের চিন্তা যেন তাদের মধ্যে না থাকে। আত্মঘাতীমূলক কাজ যেন তারা না করে। তারা যেন ধর্মান্ধ হয়ে না যায়।
মাদকাসক্তিকে দেশের দ্বিতীয় প্রধান সমস্যা এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মাদকাসক্তির হাত থেকে ছেলে-মেয়েদের উদ্ধার করতে হবে। এ জন্য সবচেয়ে দায়িত্ব হচ্ছে অভিভাবক, শিক্ষকদের। তাদেরকেও এ ব্যাপারে আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে সচেতন করতে হবে, বলতে হবে এটা ভুল পথ। অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের প্রতি লক্ষ্য রাখার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা যেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জেনে দেশকে ভালোবাসতে পারে, তাদের মানসিকতা এমনভাবে যেন গড়ে উঠে যে এই দেশ তাদের, এই দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশের কল্যাণ করতে হবে, দেশের মানুষের জন্য ভালোবাসা থাকবে।
দেশের বিভিন্ন জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেন হয় সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় হয় সরকারি, না হয় বেসরকারি হবে। তবে, অবশ্যই এটা মানসম্পন্ন হতে হবে। আমরা সেভাবেই পদক্ষেপ নিচ্ছি। বেসরকারিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য যারা অনুমতি চাইতে আসেন, তখন আমি নিজেই এক একটি জেলা নির্দিষ্ট করে দিচ্ছি কোথায় বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেন ঘরে খেয়ে বাবা-মার সঙ্গে থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারে তার ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজ স্থাপন বা পুরনো যে কলেজগুলো আছে সেগুলো সরকারিকরণ করে দিচ্ছি।
অনুষ্ঠানে দেশের সকল প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শীর্ষস্থান অধিকার করা কৃতি ২৩৩ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ইউজিসি প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ৫৬ জনের হাতে পদক তুলে দেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম। সম্পাদনা : শিমুল মাহমুদ