জনতা ব্যাংকের সুদমুক্ত কৃষিঋণ কার্যক্রম বন্ধ
জাফর আহমদ: বন্ধ হয়ে গেছে জনতা ব্যাংকের বহুল প্রশংসিত সুদমুক্ত কৃষিঋণ বিতরণ। মঙ্গা, সামুদ্রিক এলাকা, হাওড়া-বাওড় ও চরাঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকদের এ ঋণ দেওয়া হতো। কৃষকরা এ অর্থ নিয়ে সময় মতো ফেরত দিত। সম্প্রতি জনতা ব্যাংক সিএসআর বিতরণ বন্ধ করে দিলে আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যায় সুুদমুক্ত এ ঋণ বিতরণ ব্যবস্থা।
দুর্যোগ প্রবণ এলাকার যেসব প্রান্তিক কৃষক টাকার অভাবে সামান্য জমিও চাষ করতে পারে না। আবার ব্যাংকের শর্ত পূরণের অভাবে ঋণও নিতে পারে না। ফলে সামান্য জমিও বিক্রি বা কারও কাছে বর্গা দিয়ে দিনমজুরের পেশা বেছে নেয়। এ ধরনের কৃষককে জনতা ব্যাংক সুদমুক্ত ঋণ দিত। কাজ শেষে আবার ঋণ কৃষকরা যথাসময়ে ফেরতও দিত। জনতা ব্যাংক ৫ কোটি টাকা একটি তহবিল গঠন করে এফডিআর করে রেখেছে। এই টাকা থেকে যে পরিমাণ মুনাফা আসে সেই অর্থ দিয়ে সংশ্লিষ্ট শাখার পরিচালনা ব্যয় মেটানো হতো। কিন্তু কৃষক পর্যায়ের সুদমুক্ত ঋণ পেত।
তথ্য অনুযায়ী বাণিজ্যিক এই ব্যাংকটি ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১ কোটি টাকা টাকা বিতরণ করে পুরোটাই যথাসময়ে কৃষকরা ফেরত দেয়। ২০১০-২০১১ সালে ২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ৯৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ ফেরত দেয়। ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩ কোটি টাকা বিতরণ করে পুরোটাই ফেরত পায়। সুদমুক্ত এ ঋণ কৃষকদের মাঝে বিতরণের ফলে কৃষকরা উপকৃত হওয়া ও ব্যাংক যথাসময়ে ফেরত দেওয়ার কারণে পরের বছর ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হয় ৫ কোটি টাকা। মূলত দুর্যোগ প্রবণ এলাকার প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক সহযোগিতার দেওয়ার চিন্তা থেকেই জনতা ব্যাংকের ততকালীন চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাত এ কার্যক্রম চালু করেন। যাতে প্রান্তিক এ সব কৃষক বিনা সুদের এ ঋণ নেওয়ার ফলে স্বাবলম্বী হতে পারেন ও চড়া সুদের এনজিও ঋণ নিয়ে সর্বশান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার মধ্যদিয়ে জীবনমানের উন্নয়ন ঘটায়। এসব কৃষক যাতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টির পাশাপাশি নিজেরাও স্বাবলম্বি হতে পারে। পরবর্তীতে জনতা ব্যাংকের সিএসআর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে প্রশংসিত এ কার্যক্রমটিতে চলতি ২০১৬-১৭ বছরে বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সেকশন প্রধানদের অনাগ্রহের কারণে ঋণ আদায় বন্ধ করে দেয়।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে জনতা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, সুদমুক্ত ঋণ কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। সাময়িক বরাদ্দ বন্ধ আছে, আবার চালু করা হবে। খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টিতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে আমরা ব্যাংকের পক্ষ থেকে ভূমিকা রেখেছি, এখনো রাখছি। সুদমুক্ত ঋণ বিতরণের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকদের সচ্ছল করতে আমরা যে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছি আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সম্পাদনা: রফিক আহমেদ