নিবন্ধন বাতিলের ‘নির্বাচনী ফাঁদ’ দিয়ে বিএনপিকে আনতে চায় সরকার ইসি না চাইলে দলের নিবন্ধন বাতিল হবে না
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল বিএনপির নিবন্ধন বাতিল হওয়া না হওয়া নিয়ে চলছে বিতর্ক। ২০০৮ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আইন (আরপিও) অনুযায়ী পর পর দু’ইবার জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে যে কোন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল হবে। এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ বলছেন, নিবন্ধন হারানোর ঝুঁকিতে আছে বিএনপিসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল। আরপিও’র এই বেড়াজাল নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে কথা বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন না চাইলে কেনা রাজনৈতিক দলেরই নিবন্ধন বাতিল হবে না। এক্ষেত্রে শেষ মুহুর্তে শুনানি করতে পারে ইসি। তাছাড়া ২০১৮ সালের মধ্যে বিএনপি বা ঝুঁকিতে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো কোনো একটি উপনির্বাচনে অংশ নিলেই আরপিও’র এই ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।
বিশ্লেষকরা আরও বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল বিশেষ করে যেসব দল নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি সেই সব দলকে নির্বাচনে টানতে এই অস্ত্র ব্যবহার করতে চাইছে। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা আরপিও’র ধারাটি সামনে নিয়ে আসছেন। এখানে ক্ষমতাসীন জোটের মূল লক্ষ্য হলো বিএনপিকে নির্বাচনে আনা যাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করা যায়। গত ৫ জানুয়ারির নিয়ম রক্ষার নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি চায় না আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে সময়ের নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইনে বলা আছে পরপর দু’বার কোনো রাজনৈতিক দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকি থেকে যায়। তবে এ ব্যাপারে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। কেননা, নিবন্ধন বাতিল হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কমিশনের। কোনো দল যদি নিজেই নিজেকে বিলুপ্ত করে বা সরকার কোনো দলকে নিষিদ্ধ করে তা হলে সরাসরি কমিশন ওই দলের নিবন্ধন বাতিল করবে। কিন্তু নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কারণে বাতিলের প্রয়োজন হলে কমিশনকে অবশ্যই দলটির কথা ও নির্বাচনে না যাওয়ার যুক্তি শুনতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন বলেছেন, আমি মনে করি একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। তবে নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি আওয়ামী লীগ এবং সরকার দলীয় রাজনীতিকদের কাছ থেকে এভাবে প্রতিনিয়ত বলা ঠিক নয়। কারণ কোনো একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি নির্ভর করে নির্বাচন কমিশনের উপর। কাজেই ইসির উচিত নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং সবার কাছে গ্রহনযোগ্য করতে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করা। আর সরকার পক্ষের প্রতি আমার আহ্বান, নিবন্ধন বাতিলের এই ফাঁদ দিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে বাধ্য না করে, প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করা।
উল্লেখ্য, নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) আইনের ৯০ এইচ (১) (ই) ধারা বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হবে। আরপিও ৯০ এইচ (১) ধারায় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পাঁচটি কারণে কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে। এই ধারার (ই) উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল হবে, যদি কোনো রাজনৈতিক দল পরপর দুটি সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়।
অবশ্য নিবন্ধন বাতিলের ক্ষেত্রে কোনো দল যদি ৯০ এইচ (১) (ই) ধারা লঙ্ঘন করে, সে ক্ষেত্রে দলটির নিবন্ধন সরাসরি বাতিল হবে না। পরপর দুবার নির্বাচনে অংশ না নেওয়া দলটিকে শুনানিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেবে। কমিশনের কাছে দলটির বক্তব্য গ্রহণযোগ্য না হলেই কেবল তারা নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেবে।
এর আগে নবম ও দশম সংসদের সাধারণ নির্বাচনে অংশ না নিয়েও খেলাফত মজলিসের নিবন্ধন বাতিল না হওয়ার নজির রয়েছে। তবে দলটি মূলত উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ ব্যাপারে দলের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ওই দুই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় দলের নিবন্ধন কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে আমাদের কাছে ইসি চিঠি দিয়েছিল। আমরা এর জবাব দিয়েছি। দলটির জবাবে কমিশন সন্তুষ্ট হয়ে নিবন্ধন বহাল রেখেছে। কিন্তু ইসি ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানান, মুলত ২০০৯ সালে রংপুর-৩ ও ২০১১ সালে হবিগঞ্জ-১ উপ-নির্বাচনে দলটি প্রার্থী দেওয়ায় তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা জানান, আগামীতে যে কোন একটি উপ-নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী দিতে পারে। অথবা জাতীয় নির্বাচনে নামমাত্র যে কোন আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন বর্জনের অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে পারে। বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি দলটিকে নির্বাচনে নিতে সরকারের ‘নির্বাচনী ফাঁদ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপির মতো একটা দলের নিবন্ধন বাতিল করাটা এত সহজ নয়। তা ছাড়া, আগামী নির্বাচনে সরকারকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের দাবি মানতে বাধ্য করে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। সম্পাদনা: এনামুল হক