মানবজাতির সৃষ্টি তত্ত্ব ও দায়িত্ব
মুহাম্মদ কালিম সিদ্দিকি
মানবজাতিকে আল্লাহ তায়ালা দুটি গুণ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। পার্থিব লোভ এবং ভয়। মানুষ কোনো না কোনো বিষয়ে অবশ্যই লোভী। যদি কেউ বলে আমি লোভী নই, সেটা মেনে নেয়া যায় না। কারণ কেউ সম্পদের, কেউ ক্ষমতার, কেউ পদের, কেউ সম্মান অর্জনের, কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির, কেউ জান্নাতের লোভী। তেমনিভাবে সকল মানুষ ভীতুও। কেউ সাপকে ভয় করে, কেউ কুকুরকে, কেউ পুলিশকে, কেউ চোর-ডাকাতকে, কেউ বেইজ্জত হওয়াকে, কেউ আল্লাহর অবাধ্য হওয়াকে। লোভ এমন একটা বস্তু, যা মানুষকে গাধার চেয়েও নির্বোধ বানিয়ে ফেলে। বান্দার যেকোনো বিষয় আল্লাহর সন্তুষ্টিতেই হয়। তিনি যদি না চান, সেটা বাস্তবায়ন অসম্ভব। তিনি যেহেতু সবকিছুর মালিক, তাই সকল সৃষ্টি একমাত্র তাঁর আদেশে চলবে, তাঁরই আনুগত্য করবে। সকল নবী-রাসূলের দাওয়াত ছিলো, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো উপাস্য নেই। এই বিশাল পৃথিবী, চাঁদ-সূর্য, তারকারাজি, গ্রহ-উপগ্রহ, তরুলতা, মানবদানব, পশুপাখি, সাগর-পাহাড় সবকিছু তিনিই সৃষ্টি করেছেন। সবকিছু তাঁরই আনুগত্য করে।’ সূর্য রোজ পূর্ব দিগন্তে উদিত হয়ে পশ্চিমে অস্ত যায়। এটা একমাত্র তাঁরই ইশারায়। কখনও সূর্য উত্তর দিক থেকে উদিত হয়ে দক্ষিণে অস্ত যায়নি। আমগাছ আম দিচ্ছে, কাঁঠালগাছ কাঁঠাল, ডুমুরগাছ ডুমুর, নিমগাছ নিম।
কখনোই এর বিপরীতটা হয়নি। যাকে যেই কাজে নিয়োজিত রাখা হয়েছে, নিরলসভাবে সে সেই কাজ করে যাচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে কতো সুন্দরভাবে সম্বোধন করে বলেছেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। তোমাদের মানুষের কল্যাণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে বাধা দেবে।’ তিনিই আল্লাহ, সর্বশক্তিমান। অনন্ত মহিমায় অদ্বিতীয়। সবকিছুর সৃষ্টিকারী, রক্ষাকর্তা, পালনকারী। খাওয়াপরা, রোগ-শোক মৃত্যু কোনোকিছুই তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। জীবন-মরণের মালিক তিনিই। রিজিকদাতা, আইন এবং বিধানদাতাও একমাত্র তিনি। সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান পালনের নামই হলো মুসলমানিত্ব। আল্লাহ তায়ালা আমাদের নাম দিয়েছেন ‘মুসলমান’। যে বস্তু আল্লাহর অনুগত, সে-ই মুসলমান। তবে সবার কাজ ভিন্ন। সূর্যের কাজ আলো দেয়া, তাই তার জন্য আলো দান করার মাঝেই আল্লাহর আনুগত্য; আমগাছকে সৃষ্টি করা হয়েছে আম দেয়ার জন্য, আম দেয়ার মাঝেই তার আনুগত্য। তেমনিভাবে মানবজাতিকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন আম্বিয়ায়ে কেরামদের প্রতিনিধিত্ব করা ও তাদের ধর্ম জাতির কাছে পৌঁছানোর জন্য। মুফাসসিরগণ সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজ থেকে বাধাপ্রদান সম্বলিত আয়াতটির ব্যাখ্যায় বলেন, ‘ধর্মহীনকে ধর্মের প্রতি আহবান করাই এর উদ্দেশ্য।’ পৃথিবীর শুরু থেকেই মানবজাতির মাঝে শ্রেণিবিন্যাস রয়েছে। ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, বড়-ছোট, মালিক-শ্রমিক, মুসলমান-কাফের। ধনীর কাজ গরিবকে আর্থিক সহযোগিতা করা, মালিকের কাজ শ্রমিকের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করা।
বাদশাহর কাজ প্রজার প্রতি ন্যায়ানুগ আচরণ করা, তেমনিভাবে একজন মুসলমানের কাজ কোনো কাফেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেয়া। কোনো অমুসলিম ভাইয়ের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ কাজে পিছপা কীসের! যে বিষয় আল্লাহ তায়ালা করতে বলেছেন, সেটা না করা বিপদ। যে কাজ রাসুল (সা.) করেছেন, তা অবশ্যই আমাদের করতে হবে। কোনো কাজ করতে গেলে কমবেশি কষ্ট-সাধনা লাগে। সেজন্য সে কাজ ছেড়ে দেয়া বা তাতে আগ্রহী না হওয়া বোকামি। জাহান্নামমুখো মানুষগুলোকে কীভাবে জান্নাতের দিকে নিয়ে আসা যায়, সে নিয়ে ভাবতে হবে। আজ অবধি যতোজন ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছে, কারো ব্যাপারে শুনিনি ইসলাম ছেড়ে আগের ধর্মে ফিরে গেছে। এটা ইসলামের একটি অনন্য বৈশিষ্ট; যা অন্য কোনো ধর্মে নেই। এ দায়িত্ব আমাদের সোপর্দ করা হয়েছে। তাই যথাযথভাবে পালন করা চাই। নইলে আমাদের বদলে নতুন কোনো জাতিকে প্রেরণ করবেন, যারা এ দায়িত্বটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করবে। তাই সময় থাকতে আমরা নিজেদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হই।
আলোচক : বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক
শ্রুতিলিখন : ইমরান হুসাইন