সময়ের স্বল্পতায় ব্যাপক কর্মসূচি নয় ‘২৫ মার্চ স্বীকৃতি আদায়ে চিঠি যাচ্ছে জাতিসংঘে’
তরিকুল ইসলাম সুমন: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বর্বরোচিত গণহত্যা স্মরণে প্রথমবারের মতো ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। একইসঙ্গে এই দিনটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি (আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস) আদায়ের জন্য চলতি মার্চ মাসেই জাতিসংঘকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক।
গতকাল সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের জানান, ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসাবে পালনের বিষয়টি জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে গণহত্যা দিবস পালনের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্রও জারি করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জাতিংঘের কাছে পাঠানোর জন্য আবেদনপত্রও প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। তবে কবে এবং কাকে দিয়ে পাঠানো হবে তা এখন ঠিক করা হচ্ছে। জাতিসংঘে এ (প্রস্তাব) উঠানোর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সমর্থন আদায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হবে।
তিনি বলেন, আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহিদ দিবস পালনের পেছনে ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালন করা হলেও এর পেছনে কোনো ইতিহাস নেই। ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস পালন করা উচিত এবং এর পেছনে সমস্ত তথ্য উপাত্ত, যুক্তি উপস্থাপনে ডকুমেন্টস তৈরি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে এসব তথ্য উপাত্ত বিভিন্ন দেশ বা সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালন করা উচিত, এর পেছনে যুক্তিগুলো কূটনৈতিকভাবে জোরদার করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘গণহত্যা দিবস’ প্রথমবারের মতো পালন করা হবে। সময়ের স্বল্পতার কারণে ব্যাপক কর্মসূচিতে এ দিবস পালন করা সম্ভব না হলেও বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে এ ঘটনা মাইলফলক হয়ে থাকবে। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ: গণহত্যা ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি জেলা, উপজেলায় ২৫ তারিখ এ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও গণহত্যা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করা হবে।
বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে দিবসটি পালনের বিষয়ে তিনি বলেন, দুতাবাসগুলোতে আমরা এ বছর নির্দেশনা দেইনি। দাওয়াতের বিষয়ে দূতাবাসের যে একটা নিয়ম আছে, সেই নিয়মটি পালন করতে ন্যূনতম ৭ দিন লাগে। সেই সময়টা আমাদের নেই, তবে দুতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে পালন করা হবে।
গণহত্যা দিবস পালন না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং একুশে ফেব্রুয়ারির মতোই ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালিত হবে। এ দিবস যদি কেউ পালন না করে তাহলে তা আপনারা বা জনগণই এর বিচার করবে। এবার যেহেতু প্রথমবারের মতো পালিত হচ্ছে। আর এ অল্প সময়ের মধ্যে হয়তো কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে কর্মসূচি পালন সম্ভব নাও হতে পারে। তবে ভবিষ্যতে অন্যান্য জাতীয় দিবসের মতো গণহত্যা দিবসও পালিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহমুদ রেজা খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদনা : শিমুল মাহমুদ