বগুড়ায় কিস্তি না দেওয়ায় বসতঘরে তালা
প্রবীর মোহন্ত,বগুড়া : ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় বগুড়ার শাজাহানপুরে ‘মানবিক সাহায্য সংস্থা’ নামের একটি এনজিও দিন মজুরের বসতঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার স্থানীয় কর্মিরা সক্রিয় হয়ে উঠলে তড়িঘড়ি করে তালা খুলে দেওয়া হয়। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানোর পর ঘরে ফিরেছে ওই পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাজাপুর কাগজীপাড়ার দিনমজুর বাবলু মিয়ার স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম গত বছরের আগস্টে ‘মানবিক সাহায্য সংস্থা’ নামের একটি এনজিও থেকে মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নেয়। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত কিস্তি দিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি অভাব অনটনের কারণে ২-৩টি কিস্তির আংশিক পরিশোধে ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় গত সোমবার সন্ধ্যায় বাবলু মিয়ার বসত ঘরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এতে চরম বিপাকে পড়ে দিনমজুর বাবলু মিয়ার পরিবার। ওই রাতে বৃষ্টি হয়। নুরনবী ও মীম নামের দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে তারা বৃষ্টির পানিতে ভিজে বাড়ির উঠানে রাত কাটায়। রান্না করা খাবার ঘরে তালাবদ্ধ থাকায় না খেয়েই রাত কেটেছে তাদের। পরদিন মঙ্গলবার তাদের ক্ষুধা মিটেছে প্রতিবেশিদের দেয়া খাবারে। সন্ধ্যায় এ সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লে গণমাধ্যম ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শাজাহানপুর উপজেলা শাখার কর্মিরা মানবিক সাহায্য সংস্থার শাজাহানপুর শাখা কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া শুরু করেন। এ সময় সংস্থাটির শাখা ম্যানেজার রেজাউল করিম কৌশলে দিনমজুর বাবলু মিয়ার বসত ঘরের তালা খুলে দেওয়ার ব্যবস্তা করেন। নুরুন্নাহার বেগম জানিয়েছেন, তিনি নিজে পরের বাড়িতে কাজ করেন। স্বামী বাবলু মিয়া দিনমজুরি করেন। দু’জনের সামান্য আয় দিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকা এবং ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চলে অতি কষ্টে। তাই মাঝে মধ্যে কিস্তি দিতে সমস্যা হচ্ছে।
বসত ঘরের দরজায় তালা লাগানোর বিষয়টি স্বীকার করে শাখা ম্যানেজার রেজাউল করিম জানিয়েছেন, নুরুন্নাহার বেগম সহজে কিস্তি দিতেন না। অনেক কষ্টে তার কাছ থেকে কিস্তির টাকা আদায় করা হতো। তারপরও ২-৩টি কিস্তির আংশিক টাকা পরিশোধ করেননি। তাই কিস্তি আদায়ে চাপ সৃষ্টির জন্যই বসত ঘরের দরজায় তালা দেওয়া হয়েছে।
শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাফিউল ইসলাম জানিয়েছেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট এনজিও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান