রাজধানীর ৩২৬ হোটেলের ৩১৭টি অগ্নিঝুঁকিতে
বিপ্লব বিশ্বাস: বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পাঁচতারকা হোটেলের মর্যাদাপূর্ণ তালিকায় রয়েছে ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় বিদেশি বিজনেস ট্রাভেলারদের পছন্দের তালিকায়ও রয়েছে হোটেলটি। যদিও অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ আবাসিক হোটেলের তালিকায় রয়েছে এটি। শুধু রিজেন্সিই নয়, ঢাকার ৩২৬টি আবাসিক হোটেলের মধ্যে ৩১৭টিই অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। অগ্নিনির্বাপণ সক্ষমতা বাড়াতে এসব হোটেলকে এক মাস সময়ও বেঁধে দিয়েছে সরকারি সংস্থাটি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট পরিদর্শনে যায় ফায়ার সার্ভিসের ৭ নং পরিদর্শক দল। পরিদর্শন শেষে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, হোটেলটির ১৫ তলাবিশিষ্ট ভবনের পঞ্চম থেকে ১৫তলা পর্যন্ত বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র, ফায়ার অ্যালার্ম ও জরুরী নির্গমন প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে অভিজাত এ আবাসিক হোটেলের এ অংশে অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে হোটেল কর্তৃপক্ষকে ৩০ দিনের মধ্যে অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধির নোটিস দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হোটেলটির সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের ব্যবস্থাপক এসএমএইচ আমির বলেন, হোটেলের পঞ্চম থেকে ১৫তলা পর্যন্ত অংশে অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই রয়েছে। পাশাপাশি সতর্কতা হিসেবে প্রতিবছরই আয়োজন করা হয় অগ্নিনির্বাপণ মহড়াও। এর পরও ফায়ার সার্ভিস কী কারণে এটিকে ঝুঁকির তালিকায় রেখেছে, তা বোধগম্য নয়। হোটেল ভবনটির চারতলা পর্যন্ত রাজউকের মার্কেট। নিরাপত্তার স্বার্থে মার্কেটটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও হোটেল কর্তৃপক্ষই তদারক করে।
জানা গেছে, গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ঢাকাকে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করে সব ধরনের স্থাপনা পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তৃতীয় দফায় ঢাকার ৩২৬টি আবাসিক হোটেল পরিদর্শনে যায় ফায়ার সার্ভিস। পরিদর্শন শেষে একটি প্রতিবেদনও দেয়া হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী এ আবাসিক হোটেলগুলোর মধ্যে ৩১৭টিরই অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সক্ষমতা নেই। অর্থ্যাৎ রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোর ৯৭ দশমিক ২৩ শতাংশই রয়েছে অগ্নিঝুঁকিতে। এর মধ্যে ৭০টি আবাসিক হোটেলকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর সন্তোষজনক মতামত দেয়া হয়েছে মাত্র নয়টি আবাসিক হোটেলকে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (পরিচালন) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, পরিদর্শনে মাটির নিচের জলাধারের ধারণক্ষমতা, অবস্থানকারীর সংখ্যা, প্রবেশদ্বারের প্রশস্ততা, স্মোক অ্যান্ড হিট ডিটেক্টর, মেঝের আয়তন, জরুরী নির্গমন সিঁড়ি, লিফট ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখা হয়েছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতেই সংশ্লিষ্ট আবাসিক হোটেলগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ আবাসিক হোটেলগুলোর কর্তৃপক্ষকে ৩০ দিনের মধ্যে অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা লিখিত নোটিস দিয়েছি। এর পর আমরা এসব স্থাপনা আবারও পরিদর্শন করব। তখনো অবস্থার পরিবর্তন না হলে সংশ্লিষ্ট হোটেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে। সম্পাদনা: এনামুল হক