২৫ মার্চের স্বীকৃতি আদায় গণহত্যার ভিডিও দলিলপত্র যাচ্ছে কূটনীতিকদের কাছে
তরিকুল ইসলাম সুমন: ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে গণহত্যার ভিডিও ফুটেজ ও দালিলিক প্রমাণাদি বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
গতকাল শনিবার প্রথমবারের মতো জাতীয় গণহত্যা দিবস উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ: গণহত্যার ইতিবৃত্ত’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা জানান।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতির জন্য ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতিসংঘে দূত পাঠিয়েছেন। অন্যান্য স্থানেও দূত পাঠানো হবে। গণহত্যার যত ভিডিও ফুটেজ ও দালিলিক প্রমাণ আছে সবকিছু কূটনীতিকদের কাছে আমরা দেব, বিশেষ করে জাতিসংঘে যারা প্রতিনিধিত্ব করেন।
তিনি বলেন, ২৫ মার্চ প্রস্তাবিত ‘গণহত্যা দিবস’ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে। আপনারা জানেন এখন ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করছে। এর পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। শুধু জাতিসংঘের একটা রেজুলেশনকে সম্মান করেই সবাই দিবসটি পালন করছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে ’৭১-এর গণহত্যার যত ভিডিও আছে আমরা সব বিদেশি কূটনীতিকদের দেব। আমরা চাই ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে বিশ্ব পালন করুক। আমাদের যেসব যৌক্তিকতা আছে, তা অন্যদেশের নেই। কাজেই আমরা বিশ্বাস করি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করব।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাশাপাশি গণহত্যার বর্বরতার চিত্রও পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে । প্রথম শ্রেণিতে লিখব ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে লিখব ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু নির্বাচিত হওয়ার পরেও তাকে ক্ষমতা দেয়া হয়নি। তৃতীয় শ্রেণিতে ’৭১ সাল পর্যন্ত যে অত্যাচার করা হয়েছে সেসবের বিবরণ লিখব। চতুর্থ শ্রেণিতে আরও একটু বেশি এবং পঞ্চম শ্রেণিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস উল্লেখ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী বছরের এই দিনে বিকাল ৪টা ৩০ মিনিট থেকে ৩১ মিনিট পর্যন্ত কোনো গাড়ি-ঘোড়া চলবে না। মানুষ জানবে এটা গণহত্যা স্মরণে করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এই দিনে অফিস বন্ধ করে এক ঘণ্টা ২৫ মার্চ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা এবং তার ডিজাইন সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই হয়েছে। সে অনুযায়ী পরে দেশের জাতীয় পতাকা চূড়ান্ত করা হয়। অপারেশন সার্চলাইটের নামে সেদিন সবখানে একযোগে আক্রমণ চালায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষক, রাজারবাগে পুলিশ লাইন্সসহ বুদ্ধিজীবীদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এই হত্যাকা-ের সিদ্ধান্ত হয় ২২ মার্চ। ইয়াহিয়া খান তার অফিসারদের নিয়ে গোপন বৈঠক করেন। সেদিন তিনি বলেছেন, ৩০ লাখ বাঙালি হত্যা করো। তাহলে তারা আমাদের অনুগত থাকবে। সে অনুযায়ী তারা আমাদের ওপর নির্যাতন চালায়। রাজাকার ও পাকিস্তানি দোসররা বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষকে হত্যায় সহায়তা করেছে। পাক সেনারা গ্রামের পর গ্রাম মানুষশূন্য করে দেয়, গণহত্যা শুরু করে। আমরা চাই, এই দিনটিকে গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হোক।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাহজাহান কামাল বলেন, ২৫ মার্চ যে গণহত্যা হয়েছে তা বাঙালি জাতির জন্য এক মর্মান্তিক ঘটনা। আন্তর্জাতিক আহ্বানে তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। সেদিন আমরা তাদের বিচার করতে পারিনি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহমুদ রেজা খানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন এবিএম তাজুল ইসলাম, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া প্রমুখ। সম্পাদনা : আনিসুর রহমান তপন