এশিয়ার সবচেয়ে বড় গির্জাঘণ্টা বরিশাল এপিফানি অক্সফোর্ড মিশন চার্চের!
খ্রিস্টীয় দর্পন ডেস্ক
অক্সফোর্ড মিশন চার্চ বাংলাদেশের শৈল্পিক গির্জা গুলোর মধ্যে অন্যতম গীর্জাটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম যা এক অনন্য ঐতিহ্যপূর্ন স্থাপত্যের নিদর্শন। প্রাচ্যের ভেনিস নামে সুপরিচিত কীর্ত্তনখোলা নদীর তীরে ৪৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত স্নিগ্ধ শহর বরিশাল।
বিংশ শতকের শুরুর দিকে খ্রিস্টীয় সম্প্রদায়ের অনেক বিদেশি স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে এখানে এবং তারই ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠে অক্সফোর্ড মিশন চার্চ। গির্জাটির প্রবেশমুখে এপিফানী গির্জা লেখা থাকলেও, লোকে চেনে অক্সফোর্ড মিশন গির্জা নামে। দেশের অন্যতম প্রাচীন গির্জাটি ১৯০৩ সালে নির্মিত। ফ্রেডরিক ডগলাজ এটি নির্মাণ করেছিলেন বলে তথ্য ঘেঁটে জানা গেছে। লাল ইটের তৈরি এই গির্জা সিস্টার এডিথ এর স্কেচ এর আদলে মূল আকৃতি দেন ফাদার স্ট্রং। নির্মান কাজ শেষ হয় ১৯০৭ সালে।
উচু প্রাচীর ঘেরা মনোরম এই চার্চের সীমারেখার মধ্যে ১৩টি ছোট-বড় পুকুর এবং অক্সফোর্ড মিশন প্রাইমারী স্কুল ও অক্সফোর্ড মিশন হাই স্কুল রয়েছে। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী এই গির্জায় রয়েছে অসংখ্য করিডোর ও ৪০ টি খিলানপথ যা এর কাঠামোকে দিয়েছে বিশেষ দৃঢ়তা। যীশু খ্রিস্টের আশীর্বাদ জ্ঞাপন স্বরূপ মূল বেদির উপর একটি বিশাল আকৃতির ক্রস রয়েছে যা দেশি-বিদেশি পর্যটক, বিশেষ করে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বিদের আকর্ষন করে। গ্রিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত অক্সফোর্ড মিশন গির্জার ভেতর আছে সুবিশাল প্রার্থনা কক্ষ।
এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় হলেও উচ্চতার দিক থেকে এটাই প্রথম বলে দাবী করেছেন এখানকার কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৩৫ একর জমির একাংশে নির্মিত গীর্জার ভেতরটা কাঠ দিয়ে খোদাই করা আর মেঝেতে নজর কাড়া মার্বেল পাথরের টাইলস খচিত। গীর্জাটি একতলা বিশিষ্ট হলেও কমপক্ষে ৫ তলা ভবনের সমান উঁচু (৫০ ফিটের কাছাকাছি)।
অক্সফোর্ড মিশনের চার্চের মধ্যে সবচেয়ে অকর্ষনীয় হলো একটি বড় ঘন্টা রয়েছে। এত বড় ঘন্টা এশিয়ার মধ্যে অন্য কোন চার্চে নেই। এটি প্রতিদিন ৭বার বাজানো হয়। গীর্জাটি কেবল প্রার্থনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। রয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বালিকা বিদ্যালয়, হাসপাতাল, লাইব্রেরী, বিশালাকার দিঘী, ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেল, খেলার মাঠ, ফুলের বাগান ও ওষুধী গাছ।
বর্তমানে ফাদার ফ্রান্সিস পান্ডে এর তত্বাবধায়নে পরিচালিত এই গির্জা বিকেল ৪ টা থেকে দর্শনার্থিদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। তবে কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে, অক্সফোর্ড মিশন চার্চ ঘুরে দেখতে হলে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি পাবার পরে যে কেউ ভিতরটা ঘুরে দেখতে পারবেন। দেখার জন্য অবশ্য বেশি সময় দেয়া সম্ভব নয়। কারন এখানে বেশির ভাগ সময় প্রার্থনা হয়।
ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা শতবছরের এই গির্জাটিকে চাইলে আপনিও ঘুরে দেখে আসতে পারেন, উপভোগ করতে পারেন আমাদের সম্প্রিতির সোনার বাংলার স্থাপত্য ঐতিহ্যের সৌন্দর্য।