গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ সংরক্ষিত নারী আসনে বসতে না দিলে এক মাসের জেল
তরিকুল ইসলাম সুমন: গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ব্যবহারে জেল জরিমানাসহ বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় তিন বছরের কারাদ- বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রেখে ‘সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৭’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালের এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে নতুন আইনটি করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার শাস্তি দ-বিধি অনুযায়ী দেওয়া হবে।
শফিউল আলম বলেন, গাড়ি চালানো অবস্থায় কোনো চালক মোবাইল ফোন বা এরূপ কোনো ডিভাইস ব্যবহার করলে এক মাসের জেল বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালালে ২ বছরের কারাদ- বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ- রয়েছে। গতিসীমা লঙ্ঘন করলেও একই শাস্তির বিধান রাখা হয়। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে তিন বছরের কারাদ- বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত নিহতের ঘটনা ঘটলে দ-বিধির আওতায় বিচার হবে। এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- ও যাবজ্জীবন কারাদ-ের বিধান রয়েছে দ-বিধিতে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। চালকের সহকারীরও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া থাকতে হবে। সহকারী হতে হলেও বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্স নিতে হবে। আগের অধ্যাদেশে সহকারীদের লাইসেন্সের কথা থাকলেও তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত ছিল না। গাড়ি চালনার জন্য চালকের বয়স আগের মতোই কমপক্ষে ১৮ বছর এবং পেশাদার চালকদের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২১ বছর।
নতুন আইনের খসড়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে অনধিক ৬ মাসের কারাদ- বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয়দ- দেওয়া হবে। আগের আইনে এই ধরনের অপরাধের জন্য তিন মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল।
চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হবে। অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় চালকদের গ্রেফতার করতে পারবে। অর্থাৎ, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালেও তাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যাবে।
মোহাম্মদ শফিউল আলম আরও বলেন, আইনে সংরক্ষিত নারী আসনে বসতে না দিয়ে কেউ ওই আসনে বসলে এক মাসের কারাদ- বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চালকরা যাতে আইন মেনে চলেন, সেজন্য পয়েন্টভিত্তিক ব্যবস্থা চালু হবে। মোট ১২ পয়েন্ট বরাদ্দ থাকবে। বিভিন্ন অপরাধের জন্য চালকের পয়েন্ট কাটা যাবে। পয়েন্ট শূন্য হয়ে গেলে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে।
শাস্তি বাড়িয়ে আইনটি করা হয়েছে। এই আইনের ৪০ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে তিন বছরের কারাদ- বা তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়।
একইসঙ্গে গাড়ির হেলপারের লাইসেন্স থাকাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর হেলপারের যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে তাকে লিখতে ও পড়তে পারতে হবে।
ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালালে তিন মাসের জেল (কারাদ-) এবং ৩৫ হাজার টাকা জরিমানার মোটরসাইকেলে চালক ছাড়া একজনের বেশি যাত্রী বহন, মোটরসাইকেলের চালক ও যাত্রীর হেলমেট ব্যবহার না করা, চলন্ত অবস্থায় চালক বা কন্ডাক্টার কোন যাত্রীকে গাড়িতে ওঠাতে বা নামাতে পারবেন না, প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুকূল সুযোগ সুবিধা না রাখা, ঝুঁকিপূর্ণভাবে গাড়িতে কোন যাত্রী বা পণ্য বহন করা যাবে না, কোন সড়ক বা মহাসড়কে গাড়ি মেরামতের জন্য যন্ত্রাংশ ও মালামাল রেখে যানবাহন বা পথচারী চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলেও একই শাস্তি পেতে হবে।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৭-এর খসড়া এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৭ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সম্পাদনা: এনামুল হক