ড. ইউনূসের কর ফাঁকি ও শ্রমিকদের অর্থ আত্মসাৎ নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা
আনিসুর রহমান তপন: গ্রামীণ টেলিকম নিট লভ্যাংশের শতকরা পাঁচ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে বণ্টন না করায় শ্রম আদালতে এখন পর্যন্ত ১৩টি মামলা হয়েছে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে এ কথা জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। এ প্রসঙ্গে চুন্নু মন্ত্রিসভায় জানান, বিদ্যমান শ্রমআইন অনুযায়ী নিট লভ্যাংশের শতকরা পাঁচ ভাগ সমহারে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করার নিয়ম থাকলেও সেটা করেননি প্রতিষ্ঠানটির মালিক ড. ইউনূস। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
মন্ত্রিসভা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এ জন্য গ্রামীণ টেলিকমকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হলেও তার কোনো জবাব দেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। তিনি জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মলিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাদের পাওনা একশত সাত কোটি টাকা পরিশোধ করার জন্য। চুন্নু আরও বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পরিশোধযোগ্য এই একশত সাত কোটি টাকার মধ্যে আবার এক ভাগ শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডে দেওয়ার বিধান রয়েছে। সেটাও পরিশোধ করেনি অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি। এক প্রশ্নেরে জবাবে চুন্নু বলেন, প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা নিজ নিজ পাওনার দাবিতে শ্রম আদালতে এসব মামলা করেছে। তাছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি বিপুল অংকের আয়কর (ট্যাক্স) ফাঁকি দিয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ টেলিকম রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্যে আয়কর বিভাগে এক হাজার নয়শত কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানালেও অডিট প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে প্রকৃত পক্ষে প্রতিষ্ঠানটি ২১ হাজার কোটি টাকার লেনদেন করেছে। এতে দেখা গেছে ড. ইউনূস অবশিষ্ট ১৯ হাজার একশত কোটি টাকা লেনদেন হলেও সেটি আয়কর নথিতে উল্লেখ করেননি। সেজন্য আবার অবশিষ্ট টাকার রাজস্ব আদায়ের জন্য ড. ইউনূস-এর কাছে জবাব চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ (এনবিআর)।
এসব জেনে প্রধানমন্ত্রী কি জবাব দিয়েছেন জানতে চাইলে, প্রতিমন্ত্রী চুন্নু অবশ্য বলেন প্রধানমন্ত্রী শুধু শুনেছেন কিছু বলেননি।
মন্ত্রিপরিষদের অপর একটি সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা বৈঠকে গণমাধ্যমের প্রতি দ্বায়িত্বশীল আচরণ করার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, গণমাধ্যম যেন সংযত হয়ে জঙ্গি হামলার খবর পরিবেশন করে। কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনেক প্রতিবেদন এমনভাবে প্রকাশ করা হয় যেগুলো দেখে জঙ্গিরা মনে করে যে তারা সফলভাবে তাদের অপারেশন সম্পন্ন করেছে। এত তারা আরও বেশি উৎসাহিত হতে পারে। তাই জঙ্গি হামলার খবর পরিবেশনে গণমাধ্যমকে আরও সংযত হতে হবে বলেন তিনি।
বৈঠকে নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গি প্রতিরোধ কার্যক্রমে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সবাইকে সম্পৃক্ত করলে জঙ্গি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এলাকায় এলাকায় জঙ্গি প্রতিরোধ করতে তাই মন্ত্রিসভার সব সদস্যকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, এর আগেও প্রধানমন্ত্রী জঙ্গি প্রতিরোধে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত