ব্রেক্সিটের পথে চূড়ান্ত পদক্ষেপের দিন আজ
প্রিয়াংকা আচার্য্য: ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে আজ। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে লিসবন চুক্তির আর্টিকেল ফিফটি সক্রিয় করার জন্য ইইউ কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানাবেন। এর আগে ২০ মার্চ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া শুরুর এ তারিখ জানানো হয়েছে। ফলে বহুল বিতর্কিত এ বিচ্ছেদ কার্যকর নিয়ে আর কোনো সন্দেহ রইলো না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সেদিন আরও বলা হয়, ইইউতে নিযুক্ত ব্রিটিশ দূত স্যার টিম ব্যারো সোমবার আর্টিকেল ফিফটি সক্রিয় করার দিনক্ষণ ইইউ কাউন্সিলকে জানিয়েছেন।
গত বছরের ২৩ জুন অনুষ্ঠিত এক গণভোটে ব্রিটেনের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইইউ ত্যাগ করার পক্ষে রায় দেয়। এরপর ইইউ ত্যাগের সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতি নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক ওই রায় কার্যকরের ভবিষ্যৎ নিয়ে বারবার অনিশ্চয়তা তৈরি করে। শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই শেষে পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে ব্রেক্সিট কার্যকর করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। গত ১৪ মার্চ পাস হওয়া এক বিলের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’কে ব্রেক্সিট কার্যকরের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেওয়া হয়। এরপরই মূলত ব্রেক্সিট কার্যকর নিয়ে সকল অনিশ্চয়তা কেটে যায়।
ইইউ সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী, সদস্যপদ ত্যাগ করতে চাইলে লিসবন চুক্তির আর্টিকেল ফিফটি সক্রিয় করার আবেদন জানাতে হয়। এ আর্টিকেলে সদস্যপদ ত্যাগের পদ্ধতি সম্পর্কে বলা আছে। আর্টিকেল ফিফটি সক্রিয় করার পর সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেয়ার আলোচনা শুরু করতে হয়। সে কারণে প্রায় ৯ মাস আগে অনুষ্ঠিত গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় গেলেও এতদিন আর্টিকেল ফিফটি সক্রিয় না করায় ইইউর সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
আর্টিকেল ফিফটি সক্রিয় করার দুই বছরের মধ্যে সম্পর্ক পুরোপুরি গুটিয়ে নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে ২০১৯ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ব্রিটেন পূর্ণাঙ্গভাবে ইইউ থেকে বেরিয়ে আসবে। মাঝের দুই বছরে দীর্ঘ ৪০ বছরের সম্পর্ক গুটিয়ে নেয়ার আলোচনা চালাবে উভয়পক্ষ।
এদিকে ইইউ নিয়মনীতি অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ব্রিটেনকে ৬ হাজার ২শ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ব্রেক্সিটের শাস্তিস্বরূপ ব্রিটেনকে এ অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে না, বরং আর কোনো সদস্যদেশ যেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভাবে, সে উদ্দেশ্যে এ অর্থ ব্রিটেনকে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে আজ বুধবার বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিক আবেদন জানানোর পরপরই পার্লামেন্টে এমপিদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী চান যত দ্রুত সম্ভব ব্রেক্সিট বিষয়ে আলোচনা শুরু হোক। তবে ইইউকে বাকী ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করে যে এ আলোচনা শুরু করতে হবে সেই বিষয়েও অবগত আছেন প্রধানমন্ত্রী।
ডাউনিং স্ট্রিট বলেছে, ব্রেক্সিট কার্যকর করা এবং ব্রিটেনের জন্য ভাল ডিল আদায় করে নেয়াই থেরেসা মের লক্ষ্য। গত বছর অনুষ্ঠিত গণভোটে ব্রিটেনের মানুষ কেবল ইইউ ত্যাগের পক্ষেই ভোট দেয়নি; একইসাথে দেশ যেভাবে চলছে তা পরিবর্তনের জন্যও বার্তা দিয়েছে।
ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় বলেন, ব্রিটেন বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিষয়টি সদস্যভুক্ত বাকী ২৭ দেশকে জানিয়ে দেয়া হবে। একই সময়ে ব্রিটেনকেও তাদের আবেদনের একটি জবাব দেওয়া হবে, যেখানে সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেয়া এবং নতুন করে সম্পর্ক নির্ধারণের সমঝোতার বিষয়ে রূপরেখা উল্লেখ থাকবে। ব্রেক্সিট সমঝোতার নেতৃত্বে থাকবেন ডোনাল্ড টাস্ক।
ব্রেক্সিটের ঘোরতরবিরোধী লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দলের নেতা টিম ফ্যারন বলেন, সিঙ্গেল মার্কেট ত্যাগ করার আগাম ঘোষণা দিয়ে থেরসা মে উগ্রপন্থা এবং বিভাজনের পদ বেছে নিলেন। তিনি বলেন, সিঙ্গেল মার্কেট ত্যাগ করার বিষয়টি গণভোটে যুক্ত ছিল না, এটা থেরেসা মের রাজনৈতিক পছন্দ।
ব্রেক্সিট কার্যকরকে ঘিরে ব্রিটেনে বসাবসকারী ইইউ নাগরিক এবং ইইউতে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বির্তক রয়েছে। তবে ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস বলেছেন, ব্রিটেনে প্রায় ৩২ লাখ ইইউ নাগরিক বসবাস করছেন। একইভাবে ইইউভুক্ত বাকী ২৭ দেশে আছে প্রায় ১২ লাখের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক। এসব নাগরিকের ভবিষ্যতের বিষয়টি অবশ্যই নৈতিকভাবে বিবেচনা করা হবে।
ইইউর ইতিহাসে যুক্তরাজ্যই প্রথম দেশ হিসেবে এই জোট থেকে বেরিয়ে আসছে। ফলে এই বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া কতটা জটিল হতে পারে সে বিষয়ে কোনো বাস্তব উদাহরণ নেই। যুক্তরাজ্যকে ব্রেক্সিট সমঝোতা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইইউভুক্ত দেশের জন্য নতুন করে অভিভাসন নীতি প্রণয়ন করতে হবে, গড়ে তুলতে হবে নতুন বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্পর্ক। একইসঙ্গে ইইউ আইন দ্বারা যুক্তরাজ্যের যেসব বিষয় পরিচালিত হতো তা যেন হঠাৎ আইনের শূন্যতা তৈরি না হয়; তাও নিশ্চিত করতে হবে। অবশ্য ইইউর পক্ষে পুনরায় সম্পর্ক নির্ধারণের প্রক্রিয়াটি আরও জটিল। কেননা আগে সদস্যভুক্ত ২৭ দেশ একমত হলেই কেবল ইইউ কোনো বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে পারবে। সূত্র : দি সান, বিবিসি, সিএনএন