তিস্তা নিয়ে মমতারই পাশে সোনিয়া
ডেস্ক রিপোর্ট : তিস্তা নিয়ে মমতার পাশেই দাঁড়ালেন সোনিয়া। বিদেশে চিকিৎসা করিয়ে দেশে ফেরার পর আজ লোকসভায় হাজির হয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী। আর তখনই তৃণমূল তিস্তা জলচুক্তি প্রসঙ্গ তোলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বেগ প্রসঙ্গে তিনি পাশে আছেন বলেই জানিয়ে দিলেন। মমতাকে না জানিয়ে তিস্তা নিয়ে এগলে তৃণমূল তীব্র প্রতিবাদ করবে বলে লোকসভায় মোদি সরকারকে হুঁশিয়ারি দিতেই হাত তুলে কেবল সহমত পোষণ করাই নয়, এ ব্যাপারে কংগ্রেস তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গেই থাকছে বলেও আশ্বাস দিলেন কংগ্রেস সুপ্রিমো। সোনিয়ার ওই সমর্থনে কৃতজ্ঞতা জানালেন লোকসভায় তৃণমূলের ডেপুটি লিডার সৌগত রায়। ধন্যবাদ জানিয়ে করমর্দন করলেন রাহুল গান্ধীর সঙ্গেও। বর্তমান
কেবল সোনিয়া গান্ধীই নয়। তিস্তা জলচুক্তি ইস্যুতে রাজ্যের স্বার্থ সবার আগে দেখা নিয়ে মমতার মতকে সমর্থন করলেন লালুপ্রসাদ যাদবের দল আরজেডি। লোকসভায় তিস্তা প্রসঙ্গ উঠতেই তৃণমূলকে সমর্থন দিলেন আরজেডি এমপি জয়প্রকাশ নারায়ণ যাদব। যদিও সরকারপক্ষে তখন সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া, অনন্তকুমারসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হাজির থাকলেও কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তিস্তা নিয়ে বিদেশমন্ত্রক পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এগবে, জানিয়ে দেওয়ার পরও আজ ফের বিষয়টি তোলায় বিজেপি এমপি মীনাক্ষি লেখির সঙ্গে সৌগতবাবুর খানিক বচসাও বাঁধল। বাংলা ‘নাকে কান্না’ কাঁদছে বলে কটাক্ষ করেন বিজেপির এমপি। তৃণমূলও পালটা জানিয়ে দেয়, রাজ্যের কথা বলবই।
আগামী ৭ এপ্রিল থেকে চারদিনের সফরে ভারতে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সফরে ভারতের সঙ্গে তাঁর বকেয়া তিস্তা জলচুক্তি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। সিকিম থেকে উৎপন্ন তিস্তা নদীর জল ভারত-বাংলাদেশ দুটি দেশের মধ্যে দিয়েই প্রবাহিত। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গের কৃষকরা ওই নদীর জল চাষের কাজে লাগায়। কিন্তু জল যেভাবে বয়ে যাচ্ছে, ভারত এবং বাংলাদেশ, দুটি দেশই তাকে নিয়ম মাফিক কাজে লাগাতে চায়। তার জন্য প্রয়োজন আন্তর্জাতিক চুক্তি। ১৯৮০ সালে দুটি দেশ ‘অ্যাডহক’ একটি চুক্তি করে। যেখানে ঠিক হয় ভারত পাবে জলের ৩৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ৩৬ শতাংশ। কিন্তু পরবর্তীকালে দু দেশের মধ্যে বেশ কয়েক দফা বৈঠকের পর নতুন ফরমুলা বের হয়। যেখানে ভারত সাড়ে ৪২ শতাংশ এবং বাংলাদেশ সাড়ে ৩৭ শতাংশ জলের অংশ ব্যবহার করবে বলে ঠিক হয়। কিন্তু ওই চুক্তি অনুযায়ী এগলে উত্তরবঙ্গে প্রভাব পড়বে বলে প্রতিবাদ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এরপরেও তৎকালীন মনমোহন সিং চুক্তি নিয়ে এগনোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু শেষমেশ বাংলাদেশে গিয়েও তিস্তা জলচুক্তি প্রসঙ্গ বাদ দিয়েছিলেন মনমোহন সিং। কংগ্রেস সূত্রে খবর, সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর পরামর্শ মতোই তিস্তা নিয়ে এগননি ইউপিএ সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চটাতে চাননি সোনিয়া। রেলমন্ত্রক ছেড়ে মমতা তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গেলেও তৃণমূল সেসময় দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের শরিক ছিল।
সেই থেকে ঝুলে থাকা তিস্তা জলচুক্তি ফের নতুন করে আলোচনার প্রসঙ্গ হিসেবে উঠে এসেছে। হাসিনার আগামী ভারত সফরই ইস্যুটিকে নতুন করে উসকে দিয়েছে। আজ লোকসভার জিরো আওয়ারে এ ব্যাপারে মমতার উদ্বেগ এবং রাজ্যের স্বার্থের প্রসঙ্গটি তুলে সরব হন সৌগত রায়। বলেন, আমাদের নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী খবর পেয়েছেন আগামী ২৫মে তিস্তা চুক্তি হতে চলেছে। হাসিনার ভারত সফরেই সে ব্যাপারে আলোচনা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। সৌগতবাবু বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে তিস্তা জলচুক্তি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যদি এগনোর কথা ভেবে থাকে, তাহলে ভুল করবে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা না বলে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে ভিডিও কনফারেন্স করছেন বলেও দাবি করে লোকসভায় তিনি বলেন, এরকম হতে থাকলে তৃণমূল মোটেই চুপ করে বসে থাকবে না। প্রতিবাদ করবে। বাংলার স্বার্থ কোনওভাবেই জলাঞ্জলি হতে দেব না। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ