নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় সোয়াট মৌলভীবাজার ও কুমিল্লায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান
আজাদ হোসেন সুমন, বিপ্লব বিশ্বাস, স্বপন কুমার দেব ও সোহেল রানা: মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাসিরপুর গ্রামের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সোয়াত টিম। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ১৮ মিনিটে এ অভিযান শুরু হয়। ঘটনাস্থল থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, ৬টা ১৮ মিনিটে অবস্থান নিয়ে জঙ্গি আস্তানার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন সোয়াট সদস্যরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রায় তিনশ রাউন্ড গুলির শব্দ পাওয়া গেছে বলে ঘটনাস্থল থেকে জানিয়েছেন আমাদের প্রতিবেদক। অভিযান এখনো চলছে।
সিলেটে জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শেষ হওয়ার পরের দিন গতকাল ভোররাত থেকে মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। পরে র্যাব ও পুলিশ ওই বাড়ি দুটি ঘিরে রাখে। দুটি জঙ্গি আস্তানার একটি মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায়। অপরটি সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুর গ্রামে। এ খবরে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে বিকাল ৫টার দিকে নাসিরপুরে পৌঁছায় সোয়াত টিম।
মৌলভীবাজার পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ বলেন, গতকাল বুধবার সকালে জঙ্গিরা আস্তানার ভেতর থেকে বেশ কয়েকটি গ্রেনেড চার্জ করে। এ কারণে তারা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের হাতে বিপুল অস্ত্র-বিস্ফোরক রয়েছে। ইউসুফ আরও জানান, উভয় আস্তানাতেই জঙ্গিরা শক্ত অবস্থানে রয়েছে। তাদের কোণঠাসা করতে এরই মধ্যে সকল প্রয়োজনীয় কৌশল নেওয়া হয়েছে। ভোররাত থেকে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে দুটি আস্তানার আশপাশের বাড়ি থেকে কৌশলে বাসিন্দাদের সরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
গতকাল সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যেও দুটি জঙ্গি আস্তানায় বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা যায়। সাড়ে ১০টার দিকে বড়হাটের আস্তানার ভেতরে বিকট শব্দে তিনটি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা, জানান তিনি। বেলা সাড়ে ১০টার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে র্যাব- ৯ এর বিপুলসংখ্যক সদস্য। যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিস। আগে থেকেই বাড়ি দুটির আশপাশের লোকজনকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য আরও বাড়ানোর পর অভিযানস্থলসংলগ্ন এলাকা থেকেও উৎসুক লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
মৌলভীবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর জালাল আহমেদ জানান, বড়হাট এলকায় তিনতলা এবং খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকার নাসিরপুর গ্রামের যে একতলা বাড়িটি রয়েছে তার মালিক সাইফুর রহমান। তিনি লন্ডন প্রবাসী। নাসিরপুর গ্রামের জঙ্গি আস্তানা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে তিনটি গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। এছাড়া থেমে থেমে গোলাগুলিও চলছে।
এ ঘটনার পরই মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাসিরপুর গ্রামের সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা থেকে ১১ জনকে আটক করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ১১ জন জঙ্গি কিনা তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিলেটের ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, ‘অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। ভেতরে ১১-১২ জনের মতো জঙ্গি থাকতে পারে।’ নাসিরপুর গ্রামের ওই বাড়ির মালিক সাইফুর রহমান। তিনি লন্ডনপ্রবাসী। তার ওই বাগান বাড়িতে দুটি সেমি পাকা এবং একটি একতলা পাকা ভবন রয়েছে। সেখান থেকে ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।
নাসিরপুর গ্রামের ওই বাড়ি দুই মাস আগে ভুয়া পরিচয় দিয়ে মাসিক সাত হাজার টাকায় ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। লন্ডনপ্রবাসী সাইফুর রহমানের ফুফাতো ভাই আতিক মিয়া জানান, দুই মাস আগে ভুয়া পরিচয় দিয়ে মাসিক সাত হাজার টাকায় বাড়ি ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। বাগান বাড়ির ভেতরে থাকা একতলা বাড়িতে দুই পুরুষ, একজন নারী ও দুটি বাচ্চা থাকতো। ওই বাড়িতে ভাড়াটিয়া ছাড়াও কেয়ারটেকার জুয়েল আহমেদ ও তার ফুফাতো বোন থাকেন। এছাড়া এক রিকশাচালকও থাকেন সেখানে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাসিরপুর গ্রামে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জঙ্গি আস্তানার আশপাশের এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে পুলিশ মাইকিং করছে। এরই মধ্যে ওই বাড়ির এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে থাকা লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের ডিআইজি কামরুল আহসান।
এদিকে, পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। মৌলভীবাজারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঘেরাও করে রাখা দুটি আস্তানায় এক ডজনের বেশি জঙ্গি রয়েছে- এমনটি ধারণা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি)।
সিটিটিসি ডিসি মহিবুল ইসলাম খান জানান, দুই জঙ্গি আস্তানার একটিতে আট থেকে ১০ জন এবং আরেকটিতে চার থেকে পাঁচ জঙ্গি থাকতে পারে। পুলিশের সহায়তায় রাত থেকে বাড়ি দুটি ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। জঙ্গিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর গ্রেনেড ছুঁড়েছে, এর জবাবে গুলি চালানো হয়েছে। সেখানে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করা হয়েছে।
কুমিল্লায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান: অন্যদিকে কুমিল্লা কোটবাড়ি এলাকায়ও গতকাল ‘জঙ্গি আস্তানা’র সন্ধান মিলেছে। কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে সদর দক্ষিণ থানার কোটবাড়ির গন্ধামতি এলাকায় একটি বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। পুলিশের সন্দেহ বাড়িটিতে জঙ্গিরা অবস্থান করছে। পুলিশ সুপার শাহ আবেদ হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। র্যাব-১১ এর অধিনায়ক মেজর মোস্তফা কায়জার জানান, বাড়ির ভেতরে এখনো তল্লাশি চালানো শুরু হয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। সম্পাদনা: রফিক আহমেদ