নারী শিক্ষার কারিগর মহিলা মাদরাসা
সাক্ষাৎকার : মাওলানা সাইফুল ইসলাম
কোন অভিভাবক যদি তার মেয়েকে ইসলামি জ্ঞান ও আধুনিক জ্ঞান ভালোভাবে শিক্ষা দিতে চান তাহলে সেই অভিভাকের উচিত হবে তার মেয়েকে একটি ভালো মাদরাসায় পড়ান। কেননা আমাদের মাদরাসাগুলোতে ইসলামি জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি কেউ যদি আধুনিক জ্ঞান অর্জন করতে চায় এবং বাইরের প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি পরীক্ষা দিতে চায় তাহলে তাকে যথেষ্ট পরিমাণে সুযোগ দেওয়া হয় এবং সহযোগিতাও করা হয়। দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন ফাতেমাতুজ্জুহরা মহিলা মাদরাসার পরিচালক মাওলানা সাইফুল ইসলাম।
তিনি আরো বলেন, একটি সমাজে নারীরা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজটা ঠিক করার জন্য খুব বেশি কিছুর দরকার হয় না যদি আমাদের সমাজের লোকেরা নারীদের নিয়ে কিছু সময় ভাবেন। তাহলেই আমাদের সমাজ অনেক উন্নয়ন ও গতিশীল হয়ে উঠবে। তবে এই ভাবনার একটা সীমা থাকাও প্রয়োজন আছে। কেননা কেউ কেউ নারীদের নিয়ে ভাবে কিন্তু তাদের সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে ভাবে না। আমার ছাত্র জীবন থেকেই মনে হয়েছে, আমাদের সমাজের নারীরা শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে আছে বিশেষ করে ইসলামি শিক্ষার ক্ষেত্রে। অথচ একমাত্র ইসলামই নারীকে সব থেকে বেশি সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে। এমনকি সব থেকে বেশি অধিকারও ইসলাম নারীকে দিয়েছে। তাই আমি মহিলা মাদরাসা করার মাধ্যমে নারী সমাজকে একটি শিক্ষিত সমাজ হিসাবে গড়ে তোলার কাজ করছি এবং তাদের প্রকৃত অধিকার সম্পর্কে তাদেরকে জানানোর চেষ্টা করছি। আলহামদুলিল্লাহ এখন নারী সমাজ অনেক উন্নতি লাভ করেছে।
নারীদের অন্যতম কাজ হচ্ছে ঘর ও পরিবার সামলানো। এই বিষয়টা তাদের ভালোভাবে শেখানোর মত তেমন কোন ব্যবস্থা মহিলা মাদরাসাগুলোতে নেই। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আপনার কথা হয়তো অন্য কিছু মাদরাসার ক্ষেত্রে ঠিক হতে পারে কিন্তু আমাদের এখানে এখন শিক্ষার্থীকে পড়ালেখার পাশাপাশি ঘরের কাজও শিক্ষা দেওয়া হয়। একজন মেয়ে ঘরের কাজ শেখে তার মায়ের কাছে কিন্তু আমাদের এখানে অনেক মেয়ে এমন আছে যারা সারা বছরে হয়তো ছুটি পায় ৩০-৪৫ দিন। এই ছুটিতে হয় সে তার আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঘুরতে যায় তাহলে এই মেয়েটা ঘরের কাজ শিখবে কোথায়? তাই আমরা সকল মেয়েদের ঘরের কাজ শেখার একটা ব্যবস্থা রেখেছি। আমাদের এখানে আগে “রান্না বিলাস” নামে রান্নার উপর একটা প্রশিক্ষণ কোর্স হত। এতে বাইরেরও অনেকে অংশগ্রহণ করতো কিন্তু এখন আমাদের ছাত্রী সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এই অনুষ্ঠানে আর বাইরের কাউকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয় না। আমাদের শিক্ষার্থীদেরই ভালোভাবে শিক্ষা দিয়ে থাকি। এছাড়াও আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের সেলাই কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। যাতে তারা নিজেদের আর্থিক উন্নয়ন করার সাথে সাথে সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখতে পারে।
একজন নারী মাদরাসায় শিক্ষা গ্রহণ করে তারপর মাদরাসায় শিক্ষিকা হিসাবে কাজ করছেন, এর মাধ্যমে কি পারিবারিক বিষয়টি ভেঙ্গে পড়ছে না? বিষয়টি কি আপনি কিভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আসলে বিষয়টি হচ্ছে আমাদের এখানে কয়েক ধরণের ছাত্রী থাকে। কিছু কিছু ছাত্রীর মাঝপথে বিয়ে হয়ে যায়। তারা খুব কমই লেখাপড়া শেষ করতে পারে। আর কিছু মেয়ে আছে যারা লেখাপড়া করে এবং লেখাপড়া শেষও করে। এদের মধ্যে যারা তুলনামূলক একটু কম মেধাবী তারা লেখাপড়া শেষেই বিয়ে করে ফেলে এবং সংসার জীবনে জড়িয়ে যায়। তবে এদের মধ্যে যারা আরো ভালো তারাই শিক্ষা জীবন শেষে দুই, তিন বছর শিক্ষকতা করার পরে বিয়ে করে। স্বাভাবিকভাবে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে শিক্ষকতার সাথে জড়িত থাকে না।
যে অভিভাবক একজন মেয়েকে ইসলামি জ্ঞানসহ আধুনিক জ্ঞান শিক্ষা দিতে চান তার জন্য করণীয় কী এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে সাইফুল ইসলাম বলেন, কোন অভিভাবক যদি তার মেয়েকে ইসলামি জ্ঞান ও আধুনিক জ্ঞান ভালোভাবে শিক্ষা দিতে চান তাহলে আমি সেই অভিভাককে বলবো তিনি যেন তার মেয়েকে একটি ভালো মাদরাসায় পড়ান। কেননা আমাদের এই ধরণের মাদরাসায় ইসলামী জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি কেউ যদি আধুনিক জ্ঞান অর্জন করতে চায় এবং বাইরের প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি পরীক্ষা দিতে চায় তাহলে তাকে যথেষ্ট পরিমাণে সুযোগ দেওয়া হয় এবং সহযোগিতাও করা হয়। সাক্ষাৎকার গ্রহণ: ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ