লালমনিরহাট প্রতিনিধি : তাসিন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, নারগিস ও অরুন বাক প্রতিবন্ধী। কিন্তু তাদের নৃত্য পরিবেশন ভারী চমৎকার। সামিউল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। কিন্তু তার কন্ঠের গান শুনে সবাই মুগ্ধ। তামিম বাকপ্রতিবন্ধী। বয়স মাত্র ৬ বছর। কিন্তু মোবাইল ফোনের এমন কোন প্রোগ্রাম নেই, যে তার সেটা জানে নেই। এরা সবাই সীমান্তবর্তী লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার করিমপুর নূরজাহান-সামসুন্নাহার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা সমাজের অন্যসব প্রতিবন্ধীদের মত অবহেলিত হলেও এরা জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যেতে চায়। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠা এ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও প্রতিবন্ধীদের করুনা নয়, সর্বক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। ২০১৫ সালে গড়ে উঠা এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২১১ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ১০১ জন, বাক প্রতিবন্ধী ৪০ জন, শরীরিক প্রতিবন্ধী ৬৫ জন ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৫ জন। তাদের অনেকেই লেখাপড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেধাবী হলেও নেই তাদের মেধা বিকাশের সুষ্ঠু পরিবেশ। শুধু সচেতনতার অভাবেই ওরা অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে।
প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে ৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন করে শিক্ষক থাকার নিয়ম থাকলে এ বিদ্যালয়ে মাত্র ১৫ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছে। তবে নেই তাদের একাডেমিক কোনো প্রশিক্ষণ। সমাজসেবা অধিদপ্তরের পাওয়া ৩ দিনের প্রশিক্ষণ ও নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে চলেছে তাদের পাঠদান। নেই পর্যাপ্ত উপকরণ সামগি ও খেলার মাঠ। টিন শেট ঘরে প্রচ- গরমে চলছে পাঠদান। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তাসিম, শরীরিক প্রতিবন্ধী রোকন ও সোহাগ বলেন, আমরা প্রতিবন্ধী হলেও লেখা পড়া করে দেশ ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে চাই। আমরা এ সমাজে বোঝা নই, নিজের মত করে বাচঁতে চাই।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা বলেন, বিদ্যালয়টি ২০১৫ সালে স্থাপিত হলেও এখন পর্যন্ত একাডেমিক স্বীকৃতি মিলেনি। আমরা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে বিদ্যালয়টি চালাচ্ছি।
লালমনিরহাট জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, সকল শিশুর সার্বজনীন শিক্ষা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে সরকার ৩য় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প ( পিইডিপি-৩) চালু করেছে। কিন্তু এর মাধ্যমে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা সাধারণ শিশুদের সঙ্গে তাল মিলাতে না পেরে ঝরে যাচ্ছে। এবার শুধুমাত্র বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের আওতায় প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান