টোবাকো কোম্পানির সুবিধা পেয়ে তামাক চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা
আল-আমীন আনাম : কুষ্টিয়া জেলায় আশির দশকে মাঠের পর মাঠ চোখে পড়তো সবুজ সোনালী ধান, আখ, পাটসহ অন্যান্য ফসল। এখন সেই সব জমিতে ‘বিষবৃক্ষ’ তামাক চাষ দখল করে নিয়েছে শতকরা ৮০ ভাগ ফসলের আবাদি জমি। সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরণের তৎপরতা চালানো হলেও বন্ধ করা যাচ্ছে না তামাকের আগ্রাসন।
পাশাপাশি তামাক কোম্পানিগুলোর অগ্রিম ঋণ, বিনামূল্যে বীজ, সার-কীটনাশকসহ নানা প্রলোভনে দিন দিন বাড়ছে তামাকের চাষাবাদ।
তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো মনের করছে, কোম্পানীগুলোর সুযোগ-সুবিধা এবং বিক্রয়ের নিশ্চয়তা পেয়ে তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।
কুষ্টিয়ার কৃষি বিভাগের হিসাবে জেলায় তামাক চাষ কমলেও কৃষি জমির চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ৬৫ হাজার হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে রবি মৌসুমে সিংহভাগই গ্রাস করেছে তামাক। কৃষি ভূমির এই তিন উপজেলার ৮০ ভাগ জমি এখন তামাক চাষের কবলে। আর তামাকচাষীদের উপকরণও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বৃটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ, গ্লোবাল টোবাকো, ঢাকা টোবাকো, আবুল খায়ের গ্রুপ ও নাসির টোবাকো সহায়তা করছে।দীর্ঘদিন তামাক চাষ মিরপুর, দৌলতপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এ বছর কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ছেড়ে কুমারখালীতেও পৌঁছে গেছে তামাকক্ষেত।দেশের অন্যতম তামাক উৎপাদনকারী অঞ্চলের মধ্যে কুষ্টিয়া অন্যতম। মাঠের পর মাঠ শুধু তামাকের চাষ হলেও এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই খোদ কৃষি অফিসে। তবে জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কুষ্টিয়া জেলায় সর্বমোট আবাদি জমির পরিমাণ ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৯৭৮ হেক্টর। তার মধ্যে তামাকের আবাদ হয়েছে ১৩১৫০ হেক্টর জমিতে। গত অর্থ বছরে জেলায় তামাকের আবাদ হয়েছিল ১৩৬৫০ হেক্টর জমিতে।
সরকারি হিসাবে এক বছরে কুষ্টিয়ায় ৫০০ হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ কমেছে। তবে কৃষি বিভাগের এই তথ্যের সাথে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করেছে জেলার তামাক বিরোধী সংগঠন সংস্থাগুলো। তাদের মতে, কৃষি বিভাগ যে তথ্য দিয়েছে সেটি তাদের ঘরে বসে তৈরী করা পরিসংখ্যান। মাঠে গেলে কৃষি বিভাগের তথ্যের সাথে বাস্তবের কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না।
কুষ্টিয়ার তামাক বিরোধী সংগঠন সাফ’র নির্বাহী পরিচালক মীর আব্দুর রাজ্জাক জানান, কুষ্টিয়া জেলার তিনটি উপজেলায় চলতি মৌসুমে অন্ততপক্ষে ৪২ হাজার হেক্টর আবাদি জমিতে তামাক চাষ করছেন চাষিরা। তামাক আবাদ কমেছে বলে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে সেটি সঠিক না। একজন চাষি তামাক চাষে নিরুৎসাহিত হলে নতুন দুইজন চাষি তামাক আবাদ শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, তামাক চাষ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও অধিক মুনাফার আশায় নারীসহ পরিবারের সবাই সমানভাবে কাজ করছেন তামাক ক্ষেতে। এ কাজে অংশ নিচ্ছে শিশুরাও। উৎপাদিত তামাক বিক্রি নিয়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না তাদের। এমন নিশ্চয়তা অন্য কোনো ফসল চাষের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। তাই তারা তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছেন।কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, তামাক এমন একটা লাভজনক ফসল নয়। তামাক চাষের পিছনে যে পরিমাণ পরিশ্রম করা হয় সে তুলনায় অর্থ প্রাপ্তি খুবই সামান্য। তবে তামাক কোম্পানিগুলো তাদের যে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে তা অন্য কোন শষ্য চাষে পাওয়া যায়না। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান