শিবির থেকে জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে তরুণরা গোপনে চলছে মগজ ধোলাইয়ের কাজ
ইসমাঈল হুসাইন ইমু: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপি জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও সহিংসতার ঘটনায় বিপুল সংখ্যক জামায়াত শিবির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার হয়। অনেকে গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দেন। জামিনে বেরিয়ে বেশ কিছু নেতাকর্মী বিদেশেও পালিয়ে যান। বর্তমানে যারা সংগঠনকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় রয়েছেন তারাও এখন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন।
শিবির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ইসলামী আন্দোলনের মাধ্যমে দেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করাই হচ্ছে শিবিরের অন্যতম লক্ষ্য। আর এ কারণে বিপ্লব অনিবার্য। আর এ কারণেই শিবিরের কোনো নেতাকর্মী নিহত হলে তাদের শহীদ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ যাবৎ সকল সরকার আমলেই তারা সরকারবিরোধী নানা আন্দোলন করে আসছে। এসব ঘটনায় নিহতদের তারা শহীদ আখ্যা দিয়ে নিহতরা সকলেই বেহেশতে যাবে বলে সাধারণ মানুষকেও বুঝিয়েছে। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে দলে ভিড়িয়ে জান্নাতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখানো হয়।
এদিকে সাম্প্রতিককালে যেসব জঙ্গি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে তারা সকলেই তাদের কৃতকর্মের জন্য বেহেশতে যাবে বলে জানিয়েছে। তাছাড়া শিবিরের ইসলাম প্রচারের কর্মকা-ের সঙ্গেও মিল রয়েছে। স্বভাবতই দলের কর্মকা-ে যোগ দিতে না পেরে বেহেশত পাওয়ার আশায় জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছেন অনেকেই।
অপরদিকে বর্তমানে শিবিরের কোনো কর্মকা- প্রকাশ্যে না দেখা গেলেও গোপনে চলছে তাদের মগজ ধোলাইয়ের কাজ। আগে বিভিন্ন স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংকে কেন্দ্র করে এ কার্যক্রম চলে আসলেও তারা এখন ধরন পাল্টে ফেলেছেন। বেনামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নামে সামাজিক কর্মকা-ের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে মিশে কর্মী বাড়ানোর কাজ করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কর্মকা- হাতে নেওয়ায় অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এই ছাত্র সংগঠনটি। নতুন কর্মী জোগাড়ে ব্যর্থ হয়ে নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে উঠতি বয়সী যুবক ও তরুণদের মগজ ধোলাই করছেন।
অপর একটি সূত্র বলছে, জামায়াতের কোনো নেতার ছেলে এখন আর শিবির করে না। তবে প্রকাশ্যে সরকার দলেও যোগ দেয়নি তারা। কিন্তু কৌশলে দাড়ি টুপি বাদ দিয়ে টিশার্ট আর জিন্স প্যান্ট তাদের পোশাক হিসেবে বেছে নিয়েছে।
সম্প্রতি মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় নিহত লোকমান আগে শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। পরে সপরিবারে আত্মগোপনে চলে যান। এর একপর্যায়ে জড়ান নব্য জেএমবিতে। আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের আগে তার স্ত্রী পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছেন।
ঘোড়াঘাট থানার ওসি ইসরাইল হোসেন বলেন, লোকমানের বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী মামলা হয় ২০০৮ সালের ২৫ অক্টোবর। নাসিরনগরে এক প্রবাসীর বাড়িতে নব্য জেএমবির সদস্যরা আস্তানা গেঁড়েছে খবর পেয়ে পুলিশ গত ২৯ মার্চ ভোরে এলাকাটি ঘিরে ফেলে। পরদিন সোয়াত ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সেখানে অভিযান চালায়। এতে নিহত হয় একই পরিবারের লোকমানসহ সাতজন। অন্যদের লাশ পরিবারের সদস্যরা বুঝে নিলেও লোকমানের লাশ নিতে রাজি নয় তার স্বজনরাই। সম্পাদনা: এনামুল হক