কর্মের ফল
আহমদ আবদুল্লাহ
হজরত আবু উমামা বাহেলি (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, প্রিয় নবী (সা.) একদিন বাদ ফজর আমাদের লক্ষ করে বললেন, গত রাতে স্বপ্ন দেখি আমার কাছে দুজন লোক এলেন। তারা আমার হাত ধরে আমায় দুর্গম একটি পাহাড়ে নিয়ে গেলেন। বললেন, ‘ওপরে উঠুন।’ বললাম, ‘আমি পাহাড়ে চড়তে পারি না।’ তারা সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় বললেন, ‘বিষয়টি আপনার জন্য আমরা সহজ করে দেবো।’ হঠাৎ পায়ের তলে সিঁড়ি অনুভব হলো। সিঁড়ি বেয়ে ধীরে ধীরে পাহাড়ের সমতল জায়গাটাতে এসে পৌঁছুলাম। তখনই হঠাৎ বিকট একটি শব্দে থমকে দাঁড়ালাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিসের শব্দ এগুলি?’ বললেন, ‘জাহান্নামিদের আর্তনাদ।’ কিছুদূর এগোতেই দেখি একদল নারী ও পুরুষ। তাদের দু’চোয়াল বেয়ে অনবরত রক্ত ঝরছে। চেহারায় ভয় ও অনুতাপের ছাপ স্পষ্ট। জিজ্ঞেস করলাম, ‘এরা কারা?’ বললেন, ‘এরা ঐ সকল লোক, যারা নিজেদের কথা অনুযায়ী কাজ করতো না। অন্যকে উপদেশ দেওয়া সত্ত্বেও নিজেরা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতো না।’ এর কিছুটা দূর এগোতেই আরেকদল নারী ও পুরুষের দেখা পেলাম। যাদের চোখ ও কানে পেরেক মারা হয়েছে। বিকট শব্দে যারা চিৎকার করছে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘এরা কারা? কি দোষ এদের?’
বললেন, ‘এরা ঐ সকল লোক, যারা এমনকিছু দেখার দাবি করতো, যা তারা আদৌ দেখেনি। এমন কিছু শোনার দাবি করতো, যা তারা কখনও শোনেনি।’ অর্থাৎ সর্বদা মিথ্যার আশ্রয় নিতো। তারা আমায় নিয়ে আরও সামনে এগোলেন। আরও একদল নারী ও পুরুষ আমার নজরে পড়লো। যাদের পায়ের গোছায় রশি বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। চোয়ালগুলি ক্ষতবিক্ষত। জিজ্ঞেস করলাম, ‘এরা কারা?’ বললেন, ‘এরা ঐ সকল লোক, যারা সময় হবার আগেই ইফতার করতো।’ তারা আমায় নিয়ে এলেন আরও খানিকটা সামনে। যেখানে এসে দেখলাম একদল নারী-পুরুষের লাশ। যেগুলি ফুলে-ফেঁপে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যার দৃশ্য বড্ডো বীভৎস। জিজ্ঞেস করলাম, ‘এরা কারা?’ বললেন, ‘এরা কাফেরদের নিহত ব্যক্তিবর্গ।’ হাঁটতে হাঁটতে আমরা আরও কিছুদূর এগোতেই একদল লোককে গাছের ছায়ায় ঘুমোতে দেখলাম। জানতে চাইলাম, ‘এরা কারা?’ বললেন, ‘এগুলো মুসলমানদের মৃতদেহ।’ তারা আমায় আরও সামনে নিয়ে গেলেন। যেখানে দেখলাম আরও একদল নারী-পুরুষের লাশ। যা থেকে বিশ্রী দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘এদের পরিচয় কি?’ বললেন, ‘এরা হলো ব্যভিচারী নারী-পুরুষ।’ এরপর ধীরে ধীরে আরও পথ এগোলাম। হঠাৎ দেখলাম একদল নারীকে। যাদের পায়ের গোছায় রশি বেঁধে নিচের দিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর কয়েকটি সাপ অনবরত তাদের স্তন দংশন করছে। প্রশ্ন করলাম, ‘এরা কারা?’ উত্তরে বললেন, ‘এরা ঐ সকল নারী, যারা শারীরিক সৌন্দর্য অটুট রাখতে নিজ সন্তানদের দুধ পান করা থেকে বঞ্চিত রেখেছিলো।’ এভাবে আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিলাম। আরও কিছুদূর এগোতেই দেখলাম একদল শিশুকে। যারা দুই নদীর মধ্যবর্তী স্থানে খেলা করছে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এরা কারা?’ বললেন, ‘মোমিনদের সন্তান।’ কিছু না বলেই আরও সামনে চললাম। খানিকপর এমন কয়েকজন লোকের সঙ্গে দেখা হলো, যাদের চেহারা ভারী সুন্দর। শুভ্র ও আকর্ষণীয় পোশাক পরিহিত যারা। সুগন্ধ ছড়াচ্ছে তাদের শরীর থেকে। তাদের চেহারা এতোটা উজ্জ্বল, যেনো পূর্নিমা রাতের চাঁদ। জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই সৌভাগ্যবানরা কারা?’ তারা বললেন, ‘এরা হলেন সিদ্দিক, শহিদ, সৎকর্মশীল।’ আরও কিছুদূর এগোতেই তিনজন লোককে দেখলাম, যারা শরবত পান করছিলো। সঙ্গে গাচ্ছিলো সুখের গান। জিজ্ঞেস করলাম, ‘এরা কারা?’ বললেন, ‘এরা হলেন জায়েদ বিন হারেসা, জাফর বিন আবু তালেব ও আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা।’ এরপর আমি ওপরে মাথা উঁচু করে আরশের নিচে তিনজন ব্যক্তিকে দেখলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘এরা আবার কারা?’ তারা বললেন, ‘এঁরা হলেন আপনার পিতা হজরত ইবরাহিম এবং হজরত মুসা ও ঈসা (আ.)। তারা আপনার অপেক্ষায় রয়েছেন।’ (মুজামুল কাবির : ৭৬৬৭, মুস্তাদরাকে হাকিম : ২৮৩৭)। মানুষ তার কৃতকর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করে। ভালোর জন্য ভালো, খারাপের জন্য খারাপ ফল পেয়ে থাকে। যেমনটি প্রিয় নবী ( সা.)-কে স্বপ্নের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘জলে-স্থলে মানুষের কৃতকর্মের ফলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা রুম : ৪১)। ইহ-পরকালে অধরাসুখ পেতে হলে ভালো কাজের বিকল্প নেই। জীবনটা আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর রঙে রঙিন করা বৈ উভয় জাহানের সাফল্য, সুখশান্তি ও মুক্তির আর কোনো দ্বিতীয় পথ অবশিষ্ট নেই।