কা’বা ঘরে হাদিস পাঠে ধন্য যারা
মাহফুয আহমদ
পবিত্র কোরআন দ্বারা কা’বা গৃহের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং গোটা বিশ্বের মানুষের জন্য হেদায়ত ও বরকতময়।’ (সূরা আলে ইমরান: ৯৬) মক্কা বিজয়ের দিন আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বরকতময় ঘরে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করেছিলেন। (সহিহ বোখারি: ১৩২৯, সহিহ মুসলিম: ১৫৯৮) এসবের আলোকে শাইখুল ইসলাম হাফিয ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন, কা’বা গৃহে প্রবেশ করে নামাজ আদায়, আল্লাহর জিকির এবং অন্য যে কোনো ইবাদত করা একটি উত্তম কাজ। (মাজমুউল ফাতাওয়া, ২৬/১৪৪)
এ জন্য ইসলামের ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই যে, মুসলমানরা সবসময় কা’বা গৃহে প্রবেশের সুযোগ অনুসন্ধান করতেন। সুযোগ পেলে মহান ও প্রিয়তম কোনো ইবাদতে ওই সময়টুকু বিনিয়োগ করতেন। যাদের সৌভাগ্যে কা’বা ঘরে ঢুকে হাদিস পাঠ ও পাঠদানের মতো বরকতময় আদায় করেছেন এমন ক’জন মনীষীর উদ্ধৃতি। মক্কার শায়খ আলি আস সিনজানি হানাফি রাহ. (মৃ. ১১২৫ হি.) বলেন, আমাদের শাইখ, তাত্ত্বিক গবেষক, আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে আল্লান আস সিদ্দীকি রাহ. (মৃ. ১০৫৭ হি.) এর বিরল এক সৌভাগ্য এবং বিরাট এক কৃতিত্ব এই ছিল যে, তিনি একবার পুরো সহিহ বোখারি কা’বা ঘরের ভেতরে বসে পড়েছেন। এই সৌভাগ্য অন্য কোনো আলেমের অর্জিত হয়নি। বিশিষ্ট আরব লেখক আবু মুয়াবিয়া বৈরুতি তাঁর ‘আল কুন্নাশা’ গ্রন্থে বলেন, সিনজানির এমন দাবি যথার্থ নয়। কেননা অষ্টম শতাব্দী হিজরি এবং তৎপরবর্তী সময়ের কয়েক আলেম সম্পর্কে বর্ণনা পাওয়া গেছে যে, তাঁরা কা’বা ঘরের ভেতরে সনদ বা সূত্রসহ হাদিস পাঠ করেছেন। এখানে কয়েকজন মনীষীর কথা উল্লেখ করা হলো। ১. শায়খ খলিল ইবনে কিকলিদি আল আলায়ি রাহ. (মৃ. ৭৬১ হি.)। ইবনে ফাহদ নিজ সূত্রে তাঁর শাইখ ইমাম ইরাকি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমার শাইখ ইমাম আবু সাঈদ খলিল ইবনে কিকলিদি আল আলায়ি রাহ. পবিত্র কা’বা ঘরে বসে কা’বার ভেতরে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাজ আদায় করা বিষয়ক বিলাল রাযি.’র হাদিসটি আমাকে মুখস্থ পড়ে শুনিয়েছেন। ২. শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে মুসা আবুল বাকা আদ দামিরি রাহ. (মৃ. ৮০৮ হি.)। তাঁর জীবনীতে বিবৃত হয়েছে যে, তিনি কায়রো ও মক্কায় হাদিস অধ্যাপনা করেছেন। শায়খ সালাহ আল আকফাহাসি কা‘বা ঘরের ভেতরেই তাঁর কাছে হাদিস শ্রবণ করেছেন। ৩. শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ আস সামনুদি রাহ. (মৃ. ৮৯০ হি.)। ইবনুল মুহাল্লা উপনামে তিনি সমধিক প্রসিদ্ধ। তাঁর জীবনীতে এসেছে, ৮৬৬ হিজরিতে তিনি শায়খ আবু হামিদ মক্কি রাহ.’র নিকট কা’বা ঘরের ভেতরে কয়েকটি হাদিস পড়েছেন। বস্তুত শায়খ তখন মক্কায় অবস্থানরত ছিলেন। ৪. মুহাদ্দিস আল্লামা আবদুল্লাহ সালিম রাহ. (মৃ. ১১৩৪ হি.)। পূর্ণ সহিহ বোখারি দুইবার তিনি কা’বা ঘরের ভেতরে খতম করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। ৫. শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে সোলায়মান আল মিসরি রাহ. (মৃ. ১২৪৪ হি.)। তিনি ছিলেন দৃষ্টিহীন। সমাজে হাসবুল্লাহ উপাধিতে পরিচিত ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে সাইয়েদ কাত্তানি রাহ. ‘ফাহরাসুল ফাহারিস’ গ্রন্থে বলেন, কা’বা ঘরের ভেতরে সহিহ বোখারি খতম করার মতো বিরল সৌভাগ্য তাঁর অর্জিত হয়েছে। এসব থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সবসময় উম্মাহর হৃদয়ে নবীপ্রেম এবং নবীর হাদিস প্রচার ও সংরক্ষণের অদম্য স্পৃহা বদ্ধমূল ছিল। হাদিসে নববি আমাদের ধর্মীয় মৌলিক একটি উৎস; এর সংরক্ষণ ও সম্প্রচারে উম্মাহ সর্বদা সজাগ, সচেতন ও সচেষ্ট ছিল। সুতরাং হাদিসের প্রতি সন্দেহের তীর নিক্ষেপের কোনো অবকাশ নেই। বস্তুত হাদিসের প্রামাণিকতা সন্দেহাতীতভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত। লেখক: আলোচক, ইকরা টিভি, লন্ডন