আল্লাহ ও নবীজীকে ভালবাসার তিনটি গুণ
ইসমাঈল আনিস
তিনটে গুণ এমন রয়েছে, যেগুলো আল্লাহ তায়ালা ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসার প্রমান এবং তাদের কাছে প্রিয় হবার আলামত: সদ সত্য বলা, কখনোই মিথ্যার আশ্রয় না নেওয়া। কারো আমানত আদায়ের ক্ষেত্রে গড়িমসি না করা। প্রতিবেশি-স্বজনদের সাথে ভালোবাসাপূর্ণ ব্যবহার করা। উপরোক্ত তিনটে গুণ যার মধ্যে পাওয়া যাবে প্রকৃতপক্ষেই সে আল্লাহ তায়ালা ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসে। (বাইহাকি, শুয়াবুল ইমান:২/২০১) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার অজু করছিলেন। সাহাবায়ে কেরামগণ রাদিয়াল্লাহু আনহুম বিষয়টি জানতে পেরে দ্রু ছুঁটে আসেন এবং তার অজুতে ব্যবহৃত পানি নিয়ে নিজেদের গায়ে মাখতে থাকেন। যাদের পানি মিলছিলো না তারা অপর ভাইয়ের ভেজা অঙ্গের আদ্রতা থেকে নিজেদের অঙ্গগুলো মাসাহ করছিলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যবহৃত পানি থেকে বরকত নেয়ার জন্য। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, আল্লাহ তায়ালা এবং তার রাসুলের প্রতি অত্যধিক ভালোবাসা আমাদের এ কাজে উৎসাহিত করেছে।
তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা এবং তার রাসুলের ভালোবাসার পিয়াসী হয়, অথবা এটা চায় যে, আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রিয় করে নিক, তার জন্য আবশ্যক হলো, নিম্নবর্ণিত তিনটি কাজকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরাÑ১.যখনই কিছু বলবে, সত্য বলবে। মিথ্যে যেন তোমাদের থেকে কখনোই প্রকাশ না পায়। কেননা, যে মিথ্যে বলায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তার অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় দূর হয়ে যায়। আর যার অন্তরে আল্লাহর ভয় নেই, তার অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসাও স্থান পায় না। কারণ, আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ভালোবাসা এবং মিথ্যে কখনোই এক অন্তরে একসঙ্গে একত্রিত হতে পারে না।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যবলার প্রতি উৎসাহ প্রদানপূর্বক বলেন, তোমরা সত্যকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো। কেননা, এই সত্যের মাধ্যমে তোমরা জান্নাতে পৌঁছুতে পারবে। যখন আল্লাহর কোন বান্দা সত্য বলতে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং সর্বদা সত্যের প্রসারের চিন্তায় থাকে একটা সময় আল্লাহ তায়ালা ঐ ব্যক্তির নাম সত্যবাদিদের খাতায় লিখিয় দেন। এবং তাকে প্রিয়ভাজনদের দলভুক্ত করে নেন। এর বিপরীতে মিথ্যে ইহা পাপাচার-অন্যায় এবং মন্দ স্বভাবের পরিচায়ক। যে ব্যক্তি মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, আল্লাহ তায়ালা তার নামকে মিথ্যাবাদিদের খাতায় লিখিয়ে দেন।’
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুনাফিকের চার আলামতের একটি মিথ্যাকেও সাব্যস্ত করেছেন। মিথ্যে থেকে এমন উৎকট- বিশ্রী দুর্গন্ধ বের হয়, যার কারণে ফেরেশতাগন মিথ্যাবাদি থেকে শতোমাইল দূরে চলে যান। ২.আমানত ও অন্যের হকের যথাযোগ্য আদায় করা। আল্লাহ তায়ালা এবং তার রাসুলের ভালোবাসা অর্জনের দ্বিতীয় কাজ হলো, তোমাদের আমানতদার হয়ে যাওয়া। যখন তোমাদের কাছে কারো আমানত রক্ষিত থাকে, অথবা তোমরা কারো থেক কর্জ-ধার নাও, কিংবা কারো কাজের দায়িত্বভার তোমাদের উপর ন্যস্ত হয়, কারো কাজের মূল্য তোমাদের উপর বাকি থাকে, তাহলে এসব হক তার মালিকের কাছে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে সামান্যতমও বিলম্ব করো না। বরং কোনপ্রকার কথাবার্তা ও টাল- বাহানা না করে তাদের হক তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দাও। কারো থেকে যেন কোনরুপ অভিযোগের সুযোগ না আসে। এ কাজগুলো এ কথার প্রমাণ দিবে যে, তোমাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় রয়েছে। যে ব্যক্তি আমানত ও অন্যের হক আদায়ের ক্ষেত্রে বিলম্ব- টালবাহানা করে (বর্তমান সময়ে তো এর ব্যাপকচর্চা পরিলক্ষিত হয়) তার অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকে না। অন্যথায় কখনোই এমন গর্হিত কাজের সাহস দেখাতো না।
৩. তৃতীয় কাজ হলো, প্রতিবেশিদের সাথে ভালোবাসাসুলভ আচরণ করা। যদি তোমাদের অন্তরে প্রতিবেশিদের প্রতি প্রীতি-ভালোবাসা না থাকে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুলের ভালোবাসার দাবি মিথ্যে-ভনিতা! আর যদি প্রতিবেশিদের খোঁজ-খবর নেয়া, তাদের আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং তাদের কল্যাণকমিতা পাওয়া যায়, তাহলে তোমাদের দাবি সত্য-সঠিক। কেননা, ইসলামের শিক্ষায় প্রতিবেশির হকের প্রতি অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমাকে প্রতিবেশির হকের ব্যাপারে এ পরিমাণ গুরুত্বের সাথে অসিয়ত করতে থাকেন, আমার আশংকা হতে থাকে যে, প্রতিবেশিদের উত্তরাধিকারই বানিয়ে দেওয়া হয় কি না! (তিরমিজী: ২/১৬)
লেখক: শিক্ষার্থী, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত।