তিস্তা, মমতাদি এবং প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর
রবিউল আলম
তিস্তা চুক্তি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, হচ্ছে এবং আরও হবে। আমি কোনো বিশেষজ্ঞ নই, কোনো দার্শনিকও না, সামান্য খেটে খাওয়া মানুষ। বিবেকের তাড়নায় শখের বশে লিখি। অতিসাধারণ মানুষ হয়তো আমার লেখা পড়ে বোঝার চেষ্টা করেন। অনেক লেখার পরে আমি নিজেও বুঝতে চেষ্টা করি আসলেই কি সমাজ ও রাষ্ট্র এবং দল আমার মতামত গ্রহণ করে চলতে পারবে, না পরক্ষণেই মনে হয় পৃথিবী অনেক কঠিন, প্রতিটি মানুষের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা স্বার্থ রক্ষার বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হয়, মনের সঙ্গে কর্মের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না, ভালোবাসার সঙ্গে কর্তব্যের মিল থাকে না। বাঙালির মন আছে, বাংলার মানুষকে ভালোবেসেও মমতা ব্যানার্জী তিস্তা চুক্তিতে সায় দিতে পারছেন না রাজনীতির কারণে। আমার অনেক রাগ ছিল তার উপর। বঙ্গবন্ধুর মূর্তি সরানোর আন্দোলনের প্রতিরোধ করে মনকে জয় করে নিয়েছেন মমতা ব্যানার্জী। পদ্মার ইলিশ খেতে চেয়েছেন, শেখ হাসিনা পূরণ করেছেন। বাকুড়ায় এক শোভাযাত্রায় দুঃখ করে বলেছেন, আমি কি করব তিস্তায় পানি নেই। পানির কি হবে আমি জানি না, তবে দিদি তিস্তা চুক্তি রাজনৈতিক আইওয়াশ মনে করলেও তো করা যায়, পানি না থাকতে পারে কিন্তু পানি প্রত্যাশিত মানুষের চোখের পানির কি হবে, দুটি দেশই বিব্রতবোধ করছে। তবে বাঙালি কারও আশায় থাকে না, যতদিন আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা আছেন, পদ্মা সেতুর ঋণ, আমেরিকার গার্মেন্টসের কোটা জিএসপি সুবিধা ছাড়াই আমরা ও আমাদের দেশ চলতে পারবে।
তিস্তার পানি ছাড়াই কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে শুধুমাত্র বাঙালির মনের জোরের কারণে। শুধু শুধু রাজনৈতিক হাতিয়ার করে তিস্তা চুক্তি আইওয়াশ দেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই। প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ভারত ইতোমধ্যে গরু নিয়ে অনেক রাজনীতি করেছে, গরুর জন্য সীমান্ত হত্যা এখনো বন্ধ করা যাচ্ছে না। ভারত যেহেতু চাচ্ছে না গরু আমাদের দেশে আসুক, আমরাও চাই না গরু নিয়ে কোনো রাজনীতি করুক। গরু কোনো পারমাণবিক বোমার উপাদান নয়, বিজ্ঞানের বড় কোনো আবিষ্কারও নয়, যা না আনলে আমাদের দেশ অচল হয়ে যাবে। আমাদের কৃষকগণ অনেক সক্ষম পশু লালন পালনে। আমাদের আবহাওয়া, পরিবেশ, মিষ্টি পানি পশু লালন পালনে উপযোগী। অযথা বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে গরু ও পানি নিয়ে মতপার্থক্যের দরকার নেই। তবে স্বাধীনতাসংগ্রামে ভারতের অবদান ভুলবার নয়। বর্তমান সীমান্ত উত্তেজনা প্রতিরোধে একে অপরের সহায়তায় করতেই হবে। গরু ও পানি নিয়ে বসে থাকলে এগিয়ে যাব কখন। বাঙালির মন, মিলনমেলা হবে রাষ্ট্রপতি প্রণব মূখার্জীর রাষ্ট্রীয় ভবনে।
আমি বিশ্বাস করি, সেখানে আন্তরিকতার কোনো অভাব হবে না। ভালোবাসার মাধ্যমে যা আদায় হবে, গোস্বা ও রাগ দিয়ে হবার নয়। তিস্তা চুক্তিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে দেওয়া যাবে না। তিস্তা চুক্তির চেয়ে অনেক বড় বড় বিষয় আমাদের সামনে রয়েছে। পৃথিবী এগিয়ে চলেছে, তাল মিলিয়ে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। এদেশের মানুষের কাছে তিস্তা ভালোবাসার নিদর্শন, প্রতিবেশীর আন্তরিকতার প্রমাণ দেখতে চায় জনগণ। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছেÑ পুরনো বাঁশি না বাজিয়ে সামনে এগিয়ে চলার অঙ্গীকার করতে হবে। কেউ না দিলে গলাবাজি করে সময় নষ্ট করার সময় নেই।
বিশ্বব্যাংক টাকা দেয়নি, তা বলে পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়া বন্ধ হয়েছে? হয়নি। জিএসপি ছাড়া গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোও বসে নেই। আধুনিক যুগে হায় হায় করে বসে থাকলে হবে না, বিকল্প পথ আবিষ্কার করতে হবে। বাঙালি বীরের জাতি, পিছু হটে না। বাঙালি ভিক্ষা নিতে জানে না, তবে অধিকার আদায়ে এবং নিজের প্রয়োজন মেটাতে অলসতা করে না। এমনকি জীবন দিতেও দ্বিধাবোধ করে না। স্বাধীনতাসংগ্রাম তার বড় প্রমাণ। বাঙালির কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বিএনপি-জামায়াত তিস্তা নিয়ে যতই রাজনীতি করতে চাইবে, পারবে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা দিয়ে বাঙালির মন জয় করে নিয়েছেন। সেখানে পানি আর গরু বড় হতে পারে না। তিস্তা চুক্তি হলো কি না তা নিয়ে আমার কোনো দুঃখ নেই, দুঃখ হলো অসময়ে ফারাক্কা বাঁধ ছেড়ে দিয়ে এবং কুরবানির সময় অবাধে গরু ছেড়ে দিয়ে আমাদের কৃষককে যেন সর্বস্বান্ত না করা হয়Ñ দুই দেশকেই বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখতে হেব। ভারতকে বলছিÑ বন্ধু মনে করলে, যদি সম্ভব হয় উপকার করুন, কিন্তু ক্ষতি করবেন না প্লিজ!
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান