রাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্য কর্মীরাই চিকিৎসক
ফরিদুল মোস্তফা খান, কক্সবাজার : বুধবার রাত ২টা। সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে এসে পৌঁছালো একটি সিএনজি। তড়িগড়ি করে গাড়ি থেকে নামল মধ্যবয়সী এক পুরুষ ও নারী। সিএনজির সামনে বসা যুবক নেমেই কোলে নিল ওই অসুস্থ এক নারীকে। ছুটল জরুরী বিভাগের পানে। কিন্তু তাড়াহুড়া করে জরুরী বিভাগে আসলেও চিকিৎসকের জন্য তাদের অপেক্ষা করত হল। অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা তাদের মিলেনি। সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মী রফিকই দেখল ওই নারীকে। প্রেসক্রিপশন দিয়ে ভর্তি দিল ওই নারীকে। কিন্তু ডাক্তার না চেনা রোগীর স্বজনরা বুঝতেও পারল না তার রোগীকে কে দেখেছে। রাত ২ টা ২৭ মিনিট। জরুরী বিভাগের টেবিলের উপর ঘুমিয়ে আছে এক যুবক। কাছে গিয়ে ডাক দিতেই হকচকিয়ে উঠল। সদ্য ঘুম থেকে জাগ্রত যুবক সদর হাসপাতালের এমএলএস রুবেল। ডাক্তার আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন আছেন তবে ঘুমাচ্ছে। তার কাছ থেকেই জানা গেল বুধবার রাতের জরুরী বিভাগের নাইট ডিউটি ছিল ডা. চিন্ময় বড়–য়ার। তবে গতকাল রাত ১ টা থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত সদর হাসপাতালে অবস্থান করে একবারের জন্যও সেই চিকিৎসকের দেখা মিলেনি। সরেজমিনে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল পরির্দশন করে দেখা গেছে রাতের হাসপাতাল অভিভাবকহীন। অব্যবস্থপনায় আর তদারকির অভাবে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। হাসপাতালের যততত্র ময়লা আবর্জনা আর দুর্গন্ধ। সব কিছু মিলিয়ে যেন বেওয়ারিশ প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে ২৫০ শয্যার কক্সবাজার সদর হাসপাতাল। দিনের কর্মব্যস্ত হাসপাতালটি রাত বাড়ার সাথে হয়ে উঠে নীরব। রোগী আর স্বজনদের হাকডাক ও কান্না আর সেবা প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাপে কেটে যায় দিন। তবে রাতের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। মুমুর্ষ রোগীর কাতরতা, স্বজনদের ফ্যাকাসে চেহারা, রক্তের জন্য হাহাকার, আর ডাক্তার-নার্স ও কর্মচারীদের রাজকীয় ঘুম , স্বাস্থ্যকর্মীদের রোগী দেখা চোর-ছ্যাচড়দের লুকোচুরি, এবং কুকুরের অবাধ বিচরন রাতের হাসপাতালে।
রাত ১২টা বাজতেই নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছেন দায়িত্বরত ওয়ার্ড মাস্টার ও অন্যান্য কর্মচারীরা। শান্তির নিদ্রায় মগ্ন হচ্ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। সম্পাদনা : শাহীন আলম