হাওরে ফসলহানি, নিঃস্ব কৃষকরা পাউবোর প্রতি থুথু ছিটিয়ে প্রতিবাদ
নুর উদ্দিন, সুনামগঞ্জ : চৈত্র মাসে সুনামগঞ্জে সব হাওরে ফসলহানিতে বৈশাখের প্রথম দিনে বাংলা বর্ষবরণের বদলে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করছে জেলার সংস্কৃতিকর্মীরা। জেলার কোথাও মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়নি। উৎসব হয় নাই। কৃষকের মূখে হাসি নেই। আছে শুধু হাহাকার। হাওরের ফসলহারা কৃষকদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে উৎসব না করে এবার বিক্ষোভ ও প্রতিবাদী গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অন্য বছর কৃষকেরা পয়লা বৈশাখে আনন্দ করতেন। সাধ্য মতো বাজার-সদাই করতেন। বাচ্চাদের জন্য নতুন জামা-কাপড় কিনতেন। এবার গোলায় ধান উঠার আগেই চৈত্র মাসে সোনার ধান পানিতে তলিয়ে যায়। গোয়ালেও গরু নেই। হাতে টাকা পয়সা নেই। ফলে নেই কৃষক পরিবারে কোনো বাড়তি আয়োজন। সংস্কৃতিকর্মীরা প্রতিবছর বিভিন্ন বর্ণিল আয়োজনের মধ্যদিয়ে বর্ষবরণ পালন করেন। কিন্তু এ বছর সংস্কৃতিকর্মীদের অন্যরুপ দেখা যায়। জেলার কোথাও মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়নি। বর্ষবরণ বাদ দিয়ে তারা আজ সোচ্চার ফসলহারা কৃষকদের পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রামে। তাই বৈশাখের প্রথম দিনে কালো ব্যাজ ধারণ করে তাঁরা বিক্ষোভ করেন। সবার মুখে প্রতিবাদী গান ও স্লোগান। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা জেলা শহরের ঐতিহ্য যাদুঘরে উদীচীর নেতৃত্বে সংস্কৃতি সংগঠনের কর্মীরা ‘ফসলহারা কৃষকের পাশে আমরা’ প্রতিপাদ্যে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করছে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য অর্থ সহায়তা তুলছে। সংগঠন গুলো হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মঞ্চে এনে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে। পরে কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে সংস্কৃতিকর্মীরা ফসল ডুবির ঘটনায় জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পিআইসিসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতীকী কুশপত্তলিকায় থুথু ছিটিয়ে জুতাপেতা করে। সংস্কৃতি সংগঠনগুলো বৈশাখের নতুন কাপড় ক্রয় না করে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে আসা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেয়। উদীচী জেলার বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত ৫জন কৃষককে মঞ্চে এনে তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা দর্শকদের শোনায়। বর্ষবরণের প্রতিবাদী কর্মসূচিতে সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা, কৃষকের জন্য রেশনিং কার্ড চালু, বাধের কাজে জড়িত দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দাবি জানান সংস্কৃতিকর্মীরা। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে উদীচীর শিল্পিবৃন্দ গণসঙ্গীত পরিবেশন করে। কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন উদীচীর সভাপতি শীলা রায়, ডা. সালেহ আহমদ আলমগীর, কমরেড রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আবেদিন, সাংবাদিক পঙ্কজ দে, জেলা কালাচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী, উদীচীর সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
শুধু সংস্কৃতি কর্মীরাই নন, প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এবার পয়লা বৈশাখে কোনো বাড়তি আয়োজন রাখা হয়নি। ফসলহানির ঘটনায় করা বিশেষ সভায় জেলার সব সাংসদ, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই সিদ্ধান্ত নেন। ছাতক উপজেলার হলদিউরা গ্রামের কৃষক আনামুল হক বলেন, বৈশাখের পয়লা দিন নয়া ধানের চাউলের ভাত দিয়া শিরনি করি আমরা। ইটা বাপ-দাদার আমল থাকি চইলা আইছে। সম্পাদনা : শাহীন আলম