নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত বিএনপির নেতারা
কিরণ সেখ : ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে যতই দিন যাচ্ছে ততই বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা বাড়ছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব, সমন্বয়হীনতা এবং একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত না হওয়ার কারণে এ দুর্বলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছে দলটি। বিএনপির নেতাদের ভাষ্য, বিএনপিতে এই দুর্বলতা আগে ছিল না। কারণ আগে নেতাকর্মীরা একে অন্যের বাড়ি যেত, একে অপরে সঙ্গে দল ও ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলত। কিন্তু এখন অন্যকে দেখলে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। এছাড়া এখন সবাই দল নয়, শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। আর এসব কারণেই সাংগঠনিক দুর্বলতা দেখা দিয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা কেন বারবার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ব্যর্থ হচ্ছি। আমাদের কোথায় সমস্যা? যে কারণে এ অপশক্তি এখনো টিকে আছে, এগুলো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা আজ জানি কেমন হয়ে হয়ে গেছে। একটি চলন্ত ট্রেনে বিএনপির নেতাকর্মীরা থাকলেও একে অপরের দিকে তাকিয়ে দেখে না। তিনি বলেন, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার আগে দলের ১৫০ জন নেতার নামসহ একটি তালিকা ছড়ানো হয়েছিল। ইলিয়াস গুম হওয়ার পর থেকে এই ১৫০ জন একসঙ্গে আর বসেন না। এরপর থেকে বিএনপিতে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। যারা ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে, এটা তাদের সার্থকতা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আজ একে অপরে সহানুভূতি নেই। সবাই শুধু নিজের হিসাব নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। যার ফলে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে সরকার ও জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে রাজপথের আন্দোলনে বিষয়ে দলের কার্যক্রম নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে তৃণমূল বিএনপি। তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, গত ৫ জানুয়ারি সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা মাঠে ছিলেন না। তবে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের কর্মসূচি এড়িয়ে চলার বিষয়ে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসাবেই কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতারা রাজপথে ছিলেন না। তবে আর সবাই ছিলেন। কারণ সব নেতাই যদি গ্রেফতার হন তাহলে আগামী দিনের আন্দোলনে কারা নেতৃত্ব দিবেন।
এ বিষয়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কয়েকজন তৃণমূল নেতা বলেন, বিএনপি অনেক কেন্দ্রীয় নেতা পদ-পদবী নিয়ে রাজপথ ছেড়ে ঘরে বসে আছেন। তারা ইতোমধ্যে ৫ জানুয়ারি আন্দোলনে তাদের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। ফলে অন্যান্য নেতাকর্মীদের কাছে যদি পদ-পদবী ও ব্যক্তিগত বিষয় মুখ্য হয় তাহলে দোষ কোথায়? আর এই পদ-পদবী বিএনপিতে মুখ্য বিষয় বলেই আন্দোলনে কেউ মনোনিবেশ করতে পারছে না এবং আন্দোলন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। যার ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্পাদনা: এনামুল হক