গণভোটের হিসাব চাইছে বিরোধীদলগুলে এবার মৃত্যুদ- বহাল ও ইইউ নিয়ে ভাবছেন এরদোগান
পরাগ মাঝি: ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই নতুন সংবিধান প্রণয়নের পক্ষে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিস্যেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। যদিও ভোট গণনা শেষে ‘হা’-‘না’ ভোটে ব্যবধানটা ছিলো সামান্যই। ১ লাখ ৬৭ হাজার ভোটকেন্দ্রে প্রায় ৫ কোটি ৪০ লাখ ভোটার গণভোটে অংশ নিয়ে ‘হা’ ভোট দিয়েছে শতকরা ৫১.৩৭ ভাগ মানুষ এবং ‘না’ ভোটদানকারীরা হলেন- শতকরা ৪৮.৬৩ ভাগ। আর এ ব্যবধানেই নিজ দেশে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হলেন এরদোগান। বিরোধী এবং সমালোচকরা গণভোটে এরদোগান জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে বলে দাবি করলেও আপাতত এসব নিয়ে ভাবছেন না এরদোগান। ভাবছেন দেশে মৃত্যুদ-কেও কিভাবে বহাল রাখা যায়। কারণ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী সেনাদের বিচারকাজে এই দ-টি তার অবস্থান আরও মজবুত করে দেবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে তার দেশ ঢুকবে কি ঢুকবেনা তারও সিদ্ধান্ত দেবে দেশের জনগণ, এক বিবৃতিতে তিনি সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছিলেন।
নতুন পাওয়া ক্ষমতাবলে এরদোগান এখন চাইলেই বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন এবং একক সিদ্ধান্তে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবেন। বাতিল করে দিতে পারবেন প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ। তাই এরদোগানের সমর্থকরা রাজধানী ইস্তাম্বুুলসহ বড় শহরগুলোতে বিজয় উল্লাসে মেতেছে। কারণ, তাদের নেতা ২০২৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার পথ পাকা করেছেন।
নতুন সংবিধান অনুযায়ী, তুরস্কে পার্লামেন্টারি শাসন ব্যবস্থা বাতিল করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে। একজন প্রেসিডেন্ট সর্বোচ্চ দু’বার ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। আগামী প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর।
বিরোধী দলগুলো গণভোটের ফলকে প্রত্যাখ্যান করে রাজধানী ইস্তাম্বুুলে হাড়ি-পাতিল নিয়ে বিক্ষোভ করেছে। তারা ভোট পুনর্গণনার দাবি তুলে ওই ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করেছে। বিরোধীদল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) মোট ভোটের শতকরা ৬০ ভাগ নতুন করে গণনার দাবি তুলেছে। সিল ছাপ্পর মারা হয়নি এমন ব্যালটগুলো ‘হ্যা’ ভোট হিসেবে গণনা করা হয়েছে বলে তাদের দাবি।
বিজয়ের পর তুর্কী প্রেসিডেন্ট হাউস হুবার প্যালেস থেকে সমর্থকদের উদ্দশ্যে এরদোগান বলেন, ‘আমাদের বিজয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ বিজয়কে সম্মান জানানো উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারটি করেছি।’ এসময় তিনি তুরস্কে মৃত্যুদ- থাকবে কি-না, তা নিয়ে আরও একটি গণভোটের আভাস দেন। মৃত্যুদ- বহাল থাকলে দেশটিতে সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় কয়েক হাজার বন্দীর মৃত্যুদ- হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নির্বাচনের পর এক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন।
জানা গেছে, গণভোট চলাকালীন তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ দিয়ারবাকিরে একটি ভোট কেন্দ্রের কাছে তিন ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। রাজনৈতিক মতানৈক্যের জেরে এক গ্রাম প্রধানের ছেলে গুলি করে এ হত্যাকা- ঘটায় বলে জানা গেছে। বিবিসি, আল-জাজিরা, ওয়াশিংটন পোস্ট