রাস্তায় না নামালে রুট পারমিট বাতিল : বিআরটিএ সিটিং সার্ভিস বন্ধে অভিযান ডিপোতে বাস রেখে কৃত্রিম সংকট
আরিফুর রহমান তুহিন : দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধে অভিযান চালাচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাস মালিকদের অসহযোগিতা। সড়কে গাড়ির কৃত্রিম সংকট তৈরি করার কারণে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে ভোগান্তি বাড়ছে যাত্রীদের। বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে কর্মজীবী মানুষদের। সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। এদিকে সিটিং সার্ভিস বন্ধ ও বাড়তি ভাড়া আদায়ে বাস মালিকরা দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করছে বলে অভিযোগ করেছে যাত্রী অধিকার আন্দোলন। গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ অভিযোগ জানায় সংগঠনটি। গণপরিবহনগুলো যাত্রীদের জিম্মি করে সিটিং বাস বন্ধের প্রতিশোধ নিচ্ছে। এতে যাত্রী অধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন হচ্ছে বলে জানানো হয় বিবৃতিতে।
সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে সরকারের উদ্যোগকে সাধারণ মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। উদ্যোগটি কার্যকর করতে সকাল থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসে মোবাইল কোর্ট। কয়েকটি স্থানে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগে জরিমানা করা হয় চালক ও হেলপারকে। একটি বাসের চালককে কারাদ- দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানের খবর পেয়ে বিভিন্ন কোম্পানির বাস ডিপোতে আটকে দেয় বাস মালিকরা। এতে রাজধানীর ফার্মগেট, বনানী, রামপূরা, গুলিস্তান, আসাদগেট, মিরপুর, মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো অনেকটা ফাঁকা হয়ে পড়ে। কিছু কিছু পরিবহন রাস্তায় চলাচল করলেও অন্যদিনের তুলনায় তা ছিল সামান্য। সড়কের এ অবস্থা দেখে অনেকের কাছে ছুটির দিন মনে হয়।
রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ, উত্তরাসহ বিভিন্ন বাস ডিপো ঘুরে দেখা যায়, সেখানে বিভিন্ন পরিবহনের গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। কিছু কিছু গাড়িতে চালক থাকলেও তারা নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নিচ্ছেন। গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের না হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্রমিকরা জানান, মালিকরা সিটিং সার্ভিস বন্ধ করায় গাড়ি নিয়ে বের হতে নিষেধ করেছেন। তাই বের হচ্ছি না। সিটিং সার্ভিস চালু হলেই আবার গাড়ি নিয়ে বের হবেন বলে জানান তারা।
সড়কে বাস কম থাকার কারণ জানতে চাইলে বসুমতি পরিবহনের পরিচালক খন্দকার মনির আহমেদ বলেন, বিভিন্ন পরিবহনের কর্মীদের সঙ্গে যাত্রীদের ‘ঝামেলা’ হওয়ায় চালকরা গাড়ি চালাতে চাইছেন না। গতকাল মারামারির পর অনেক ড্রাইভার আজ বের হয়নি। সকালেও কয়েকটা বাসে মারধরের ঘটনা ঘটছে। ভাড়া কম পাওয়ায় অনেকে গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান জানান, ‘তারা গাড়ির রুট পারমিট নিয়েছে যাত্রীদের সেবা দেওয়ার জন্য। এখন যদি কেউ গাড়ি বন্ধ করে দিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি সৃষ্টি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। তাদের রুট পারমিট বাতিল করা হবে।’
এদিকে নিষেধ অমান্য করে কিছু কিছু গাড়ি এখনো সিটিং সার্ভিস চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এদের মধ্যে রাইদা এবং ওয়েলকাম, মেঘলা পরিবহন অন্যতম। তাদের প্রায় সকল গাড়ি সিটিং সার্ভিস চালাচ্ছে। রাইদা পরিবহনের চেকার আমিনুল জানান, আমাদের অফিস থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা যেন কোনো লোকাল যাত্রী না উঠাই। যদি কেউ ঝামেলা করে আমরা যেন তর্ক না করে মালিককে অবহিত করি। কোনো যাত্রী বা কেউ গাড়ি ভাঙচুর বা কোনো সমস্যা করলে বাস থামিয়ে মালিকের কাছে ফোন দেওয়া হবে। যারা গাড়ি ভাঙচুর করবে তাদের ধরা হবে, তারপরও রাইদা পরিবহন লোকাল হবে না।
আর যেসব পরিবহন লোকাল পদ্ধতিতে চলছে, তারা স্বাভাবিক নিয়মের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী ওঠাচ্ছে। ঠাসাঠাসি করে বাঁদুড়ের মতো ঝুলিয়ে যাত্রী নিতে দেখা গেছে অনেক পরিবহনকে। আবার অনেক পরিবহন সিটিং পদ্ধতিতে না চলেও ভাড়া সিটিং সার্ভিসের হিসেবেই নিচ্ছে।
বাসে ভাড়ার তালিকার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান বলেন, ২০১৫ সালের পর আর নতুন করে তালিকা হয়নি। সুতরাং তালিকায় যে ভাড়া দেওয়া আছে যাত্রীরা সেই অনুযায়ী ভাড়া দিবে। ভাড়ার তালিকা নিয়ে যাত্রীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। সম্পাদনা: এনামুল হক