চাকরির নিশ্চয়তা না পেলে ট্যানারি ঘেরাওয়ের হুমকি শ্রমিকদের
আরিফুর রহমান তুহিন : চাকরির নিশ্চয়তা না পেলে ট্যানারি ঘেরাও করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন ট্যানারি শ্রমিক নেতারা। তাদের দাবি দীর্ঘদিন ট্যানারি শ্রমিকরা ট্যানারিগুলোতে কাজ করে আসছে। অথচ তাদের কোনো নিয়োগপত্র নেই। ২০১৬ সালের সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ট্যানারি শ্রমিকদের প্রত্যায়নপত্র দেওয়ার কথা। অথচ অনেক ট্যানারি মালিক তা দিতে চাচ্ছে না। দ্রুত প্রত্যায়নপত্র না দিলে শ্রমিকরা আন্দোলনে যাবে বলে হুশিয়ার করেন নেতারা। মঙ্গলবার রাজধানীর হাজারীবাগে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন কতৃক আয়োজিত ‘বিপন্ন চামড়াশিল্প অস্তিত্ব রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক এক সমাবেসে বক্তারা এই দাবি করেন।
বাংলাদেশ ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, হাজারীবাগের ট্যানারি বন্ধ হওয়ায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্রমিকরা। তাদের চাকরি থাকবে কি না তা এখনো অনিশ্চিত। মালিকরা কিছুদিন ব্যবসা করতে না পারলে হয়তো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও না খেয়ে থাকতে হবে না। কিন্তু শ্রমিকরা একদিন কাজ না করতে পারলে পেটে ভাত পরবে না। তাদেরকে না খেয়ে থাকতে হবে। কালাম বলেন, যেসব শ্রমিক ট্যানারিতে বসবাস করত তারা পানি, বিদ্যুতের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এভাবে একটি জাতিকে অন্ধকারে রেখে আধুনিক শিল্প গড়ে উঠতে পারে না। বিসিকের দেওয়া হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরীতে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি জানান, সেখানে আমরা কোথায় যাব। আমাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। চিকিৎসা নেওয়ার মতো হাসপাতাল নেই। আর সেখানে অল্প কিছু কারখানা উৎপাদনে যেতে পারবে। ফলে বহু শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, ট্যানারি শ্রমিকদের কোনো নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না। তাই ১০১৬ সালের করা চুক্তি অনুযায়ী দ্রুত শ্রমিকদের প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার জন্য মালিকদের নিকট দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, চামড়াশিল্প ধ্বংস করতে কিছু ট্যানারি মালিক চক্রান্তকারীদের সাথে হাত মিলিয়ে শ্রমিকদের প্রত্যয়নপত্র না দিয়ে শ্রমিকদের উসকিয়ে দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য মালিক-শ্রমিকের ঐক্য নষ্ট করা। যারা প্রত্যয়নপত্র দিচ্ছে না শিগগিরই তাদের প্রত্যয়নপত্র দিতে হবে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শাহিন বলেন, চামড়াশিল্প আমাদের দেশের দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক শিল্প। এই শিল্পকে ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না। তিনি শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য বিসিকের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ফিনিস লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, একজন শ্রমিককে রেখেও আমরা সাভারে যাবো না। কেউ যদি এ ধরনের চিন্তা করে তাহলে ভুল করছে। চামড়াশিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় মালিক-শ্রমিকদের একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। শ্রকিদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, চামড়াশিল্প সাভারে স্থানান্তর হলে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বাড়বে। তাদের জীবনযাত্রার মানও বাড়বে। আমরা একটি সুন্দর পরিবেশের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি। মালিকদের আন্দোলনে শ্রমিকদের পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশে শ্রমিক নেতারা সাভারে চামড়াশিল্প নগরীতে শ্রমিকদের বাসস্থান, ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালসহ সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানান। একইসঙ্গে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, ১৫ দিনের মধ্যে সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগসহ অবকাঠামো নিশ্চয়তার দাবি করেন। তা না হলে শিল্পমন্ত্রণালয়, বিসিক ও পরিবেশ অধিদফতর ঘেরাও করা হবে বলে হুমকি দেন তারা।
ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেকসহ চামড়াশিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। সম্পাদনা: শিমুল মাহমুদহাসিনা-