রাজশাহীতে ভাস্কর্য উল্টে ফেলার সন্দেহের তালিকায় ৭ ছাত্র
ডেস্ক রিপোর্ট : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের গড়া ভাস্কর্য উল্টে ফেলার ঘটনায় ৭জন ছাত্র জড়িত বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, ওই ছাত্ররা মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অফিস সহকারী চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের গড়া সব ভাস্কর্য শিক্ষকদের কক্ষের সামনে এবং আশপাশে উল্টে পড়ে থাকতে দেখেন। এর আগে সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটানো হয় বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে দুজন ছাত্র ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। চারুকলায় নিরাপত্তাজনিত ঘাটতির প্রতিবাদস্বরূপ তারা এ কা- ঘটিয়েছেন বলে তাদের ভাষ্য। তবে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থী এ ঘটনার পেছনে সাম্প্রদায়িক শক্তি জড়িত থাকতে পারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এর আগে কখনো চারুকলার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়নি। কখনো কোনো শিক্ষার্থী এ ধরনের দাবি জানাননি কর্তৃপক্ষের কাছে। সে ক্ষেত্রে যে ছাত্রদের বিরুদ্ধের অভিযোগ উঠেছে, তারা কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারেন। ভাস্কর্য উল্টে ফেলার ঘটনাটিকে সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ও নাট্যকার মলয় ভৌমিক। তিনি জানান, ঘটনা শুনে আজ বেলা ১১টার দিকে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। সে সময় তাকে দেখে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল তার বক্তব্য নিয়ে সরাসরি সম্প্রচার করে। ওই সময় একছাত্র সরাসরি সম্প্রচারে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। বক্তব্য শেষ করে তিনি ওই ছাত্রের সঙ্গে কথা বলেন। ওই ছাত্রের সঙ্গে আরও দু-তিনজন এসে যোগ দিয়ে তাকে জানান, চারুকলায় ভাস্কর্যগুলো অরক্ষিত অবস্থায় রাখার প্রতিবাদে তারা এ কাজ করেছেন। তখন মলয় ভৌমিক ওই ছাত্রদের প্রশ্ন করেন, ‘এক রাতে মাত্র সাতজন মিলে কীভাবে শত শত ভাস্কর্য উল্টে ফেলার কাজ করলে?’ জবাবে ওই ছাত্ররা বলেন, সাতজন নয়, তারা ২০ থেকে ২৫ জন এটা করেছেন।
মলয় ভৌমিক বলেন, ‘আমি ওই ছাত্রদের বলেছি, শিল্পের অমর্যাদা করে তোমরা শিল্পের প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েছ ? এর আগে মানববন্ধন করেছ? সংবাদ সম্মেলন করেছ? স্মারকলিপি দিয়েছ? এটা কোনো প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। ছাত্ররা সে সময় আমাকে বলে, ‘তাহলে আপনি আমাদের প্রতিবাদের ভাষা শেখান।’ আমি বলেছি, ‘আমি শিক্ষক, তোমরা ছাত্রÑএর বেশি আমি তোমাদের কিছু বলব না। ওই ছাত্ররা একপর্যায়ে আমাকে উপেক্ষা করে সেখান থেকে চলে যায়।’ মলয় ভৌমিক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আমরা জানি। দেশে এখন ভাস্কর্য নিয়ে যে আলোচনা চলছে, সেটাও আমরা বুঝতে পারছি। এ পরিস্থিতিতে ঘটনাটিকে কোনোভাবে সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। সত্যিই যদি এটা প্রতিবাদ হতো, তাহলে রাতের অন্ধকারে তারা এ কা- ঘটাত না। ঘটনার পর গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত কেউ কথা বলেনি। হঠাৎ করে কয়েকজন এসে ছাত্রদের মুখপাত্র হিসেবে বলা শুরু করল। এ ঘটনার মাধ্যমে তারা বুঝিয়ে দিল ভাস্কর্য নিয়ে যা খুশি তা-ই করা যায়।’ এর আগে এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে দুজন ছাত্র গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী স্বাধীন ও ইমরান আলী সাংবাদিকদের বলেন, চারুকলায় কোনো নিরাপত্তা নেই। যখন-তখন বাইরের লোকজন এখানে ঢুকে পড়ে। এর প্রতিবাদ হিসেবে বিভাগের কয়েকজন মিলে ভাস্কর্য উল্টে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। এ ঘটনায় সাতজন ছাত্র জড়িত বলে দাবি করেন মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান মোস্তফা শরীফ আনোয়ার।
তিনি বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীরা যে কা- করেছে, তা নিন্দনীয়। ওই সাতজন শিক্ষার্থী বিকৃত মস্তিষ্কের পরিচয় দিয়েছে।’ তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে তারা বিভাগে বৈঠক করেছেন। নিন্দা জানিয়েছেন। পরে প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তা অবহিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানানো হয়। ভাস্কর্য উল্টে ফেলার ঘটনায় চারুকলা বিভাগের অন্য শিক্ষার্থীরা নিন্দা জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, এ ধরনের কা- ঘটানোর ব্যাপারে তারা কিছুই জানতেন না। এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো সমর্থনও নেই।
চারুকলা বিভাগের শিক্ষক মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক এবং গ্রাফিকস ডিজাইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনির উদ্দীন ওই সময় বলেন, শিক্ষার্থীদের গড়া এ ভাস্কর্যগুলো মাঠে রাখা ছিল। কে বা কারা এক রাতের মধ্যে এ কা- ঘটিয়েছে। শতাধিক ভাস্কর্য মাঠে উল্টে ফেলে রেখে গেছে। আর কিছু ভাস্কর্য শিক্ষকদের কক্ষের দরজার সামনে রেখে গেছে। সম্পাদনা : শাহীন আলম