সিটিং সার্ভিস বন্ধ : কার লাভ কার ক্ষতি?
মোবাশ্বের হোসেন
সিটিং সার্ভিস বন্ধের ফলে যে সব মানুষ উপকৃত হচ্ছে আর যারা কষ্ট পাচ্ছেÑ দুইয়ের বক্তব্য থেকেই প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসবে। সিটিং সার্ভিস বন্ধ করা হয়েছে যাতে জনগণের কাছ থেকে ভাড়া বেশি নেওয়া যায়। এখন তো অনেক যাত্রী বলছেন, সিটিং সার্ভিস চালু করো, আমরা আরও বেশি ভাড়া দিতে রাজি আছি। অর্থাৎ আমি মনে করি মাস্টার প্ল্যানিং ছাড়া কোনোকিছু করার মানেই হলো একটা সমস্যার বদলে দশটা সমস্যা তৈরি করা। এ ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।
বিআরটিএ বলেছে, সিটিং সার্ভিস সম্পূর্ণ বন্ধ। যেখানে যেখানে গাড়ি দাঁড়ানোর কথা সেখানে সব গাড়িকে দাঁড়াতে হবে। বিআরটিএ-র একজন বড় কর্মকর্তার সঙ্গে আমি মিটিং করেছি। বলেছি, আপনার সঙ্গে আমি একমত। আইন কঠোর করেন। একই সঙ্গে তা বাস্তবায়নও শুরু করুন।
সেক্রেটারি অফিসের সামনে প্রায় ২১টি ডাবল ডেকার বাস বসে থাকে। এই বাসগুলোর মালিক বাংলাদেশের জনগণ। একজন ভিক্ষুকের ভ্যাট দেওয়া টাকা দিয়ে কেনা। এই বাসগুলো প্রতিদিন সিটিং সার্ভিস চালাচ্ছে। সরকারি আমলাদের সকালবেলা নিয়ে আসছে, সারাদিন জনগণের বাস জনগণের কাজে না লাগিয়ে সেক্রেটারি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকছে। বিকালে আরেকবার সিটিং সার্ভিস করছে। এ সব বাসের সব ড্রাইভারদের শাস্তি দিন, ফাইন করেন। এখানেই শেষ না। আরেকটি সিটিং সার্ভিস প্রতিদিন চলছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে প্রায় ৩১টির মতো ডাবল ডেকার বাস আছে। জনগণের বাস, গণপরিবহনের বাস। সেই গণপরিবহনকে ব্যাহত করে। সাধারণ মানুষ রাস্তায় লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এই ৩১টি অথবা ৩২টি বাস সকালে একবার সিটিং সার্ভিস করছে ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের জন্য। যেখানে কোনো পোস্টে দাঁড়াচ্ছে না। যাত্রী বাইরে থেকে নিচ্ছে না। বিআরটিএ-র আইন অনুযায়ী যেটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সেই কাজটি এখানে হচ্ছে। বিকাল বেলা আরেকবার সিটিং সার্ভিস হিসেবে এ বাসগুলো ছাত্রদেকে নিয়ে যাচ্ছে। আর সারাদিন বাসগুলো জনগণকে কষ্টের মধ্যে রেখে বসে থাকছে।
এসটিপিতে (স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) বলা হয়েছে, রাস্তা ঠিক করতে হবে, ফুটপাত ঠিক করতে হবে। গণপরিবহন মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে নট ইন্ডিভিজুয়্যাল, দুইটা তিনটা কোম্পানির মাধ্যমে সারা ঢাকা শহরের ট্রান্সপোর্ট বিজনেস চালু করতে হবে। এ কাজগুলো বাদ রেখে ফ্লাইওভার বানানো হলো কেন? এটার উত্তর পেলেই সব উত্তর পাওয়া যাবে।
মানুষের জন্য রাস্তা, ফুটপাত বানাতে হবে। যেটাকে আমরা বলি, জনবান্ধব রাস্তা। ফুটপাত এবং গণপরিবহন। গণপরিবহন কখনো গণমালিকানায় রাখা চলবে না। গণপরিবহনকে একটি সিস্টেমের মধ্যে আনতে হবে। অর্থাৎ দুই-তিনটি কোম্পানি হতে পারে। না হয় দশটি কোম্পানিই হলো। সেই কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার হতে পারে অসংখ্য বাসমালিক। কিন্তু মিস্টার এক্স একটা গাড়ি কিনে একটা কোম্পানি করবেন তা হবে না। এগুলো যদি বন্ধ না করা যায় তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না।
জনগণ ও প্রাইভেট বাসগুলোর তো চামড়া নেই, মাংস নেই, হাড্ডি নেই, লাইট নেই, দরজা নেই। বলতে গেলে কিছুই নেই। তাহলে এগুলো চলে কি করে? বিআরটিএ এগুলো চোখে দেখে না। যা তাদের প্রতিদিনই সমাধান করার কথা। যে আগাছা প্রতিদিন নিড়ানোর কথা, ক্ষেত থেকে পাঁচ বছর পরপর নিড়ানি দিয়ে সেই ফসল ঘরে তোলার চেষ্টা, সেটা তো হবে না। অন্যায়, ভুল ত্রুটিগুলো ধরার কথা পুলিশ এবং বিআরটিএ-র। এখন যাদের ভুলত্রুটি ধরা হবে, তারাই পুলিশের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ধরপাকড়ের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।
এসব হচ্ছে মানুষের দৃষ্টি অন্য জায়গা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। যেমন আমাদের পুলিশ এবং ট্রাফিক ডিপার্টমেন্ট প্রায়ই বলে থাকে ভিআইপি রোডে আইন ভঙ্গ করলে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। আমার বক্তব্য হলো, এটা না লিখে লিখুন ভিআইপি রোড ছাড়া বাংলাদেশের সব জায়গা আপনারা বেআইনিভাবে গাড়ি চালাতে পারবেন! আমরা কিছুই বলব না। এটার মানে তো তাই। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছেÑ এসটিপিতে ধারাবাহিকতা রেখে বাস্তবায়ন করতে পারলে এবং আইনের কঠোর শাসন থাকলে, আইনের শাসন মানে হলো প্রত্যেকের জন্য আইন সমান।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে শহরে থাকেন সেখানেই যদি এই বেআইনি কাজগুলো চলে তাহলে সারাদেশে কি ঘটছে তা তা সহজেই অনুমেয়। সমস্ত কিছুর সমাধান করতে হবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে। আইন কঠোর থেকে কঠোরতমভাবে প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
পরিচিতি: স্থপতি
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান