খোকা-আব্বাসমুক্ত ঢাকা মহানগর বিএনপি
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : বিএনপির ঢাকা মহানগর এখন সাদেক হোসেন খোকা ও মির্জা আব্বাস মুক্ত। তাদের দ্ইু জনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে তেমন দেখা না গেলেও তা ছিল চরমে। একজন আরেক জনকে সহ্য করতে পারেন না বলে অভিযোগও রয়েছে। তাদের নেতৃত্বাধীন মহানগরে ছিল বিএনপিতে আলাদা আলাদা গ্রপিংও। খোকার গ্রুপ কাজ করলে মাঠে থাকে না আব্বাসের গ্রুপ। আর আব্বাসের গ্রুপ মাঠে নামলে মাঠে থাকে না খোকার গ্রুপ। এতে করে বিএনপির ঢাকার কমিটিতে দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা চলছিল। আর এই কারণে বিএনপির গত সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠে বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করায় বিএনপির নেতা কর্মীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। সেই সঙ্গে তারা পুরো দুই কমিটির ব্যর্থতা কাটিয়ে আগামী দিনে মহানগরের উত্তরের ও দক্ষিণের কমিটি সফল হবে বলে আশাবাদী।
সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে বিএনপির মার্চ ফর ডেমোক্রেসি ব্যর্থ হওয়ার জন্য খোকা-আব্বাসের দ্বন্দ্বকেই দায়ী করেন বিএনপির নেতারা। বিএনপি চেয়ারপারসনও মনে করেন খোকা ও সালাম ওই সময়ে খোকা যথাযথ ব্যবস্থা নিলে, মাঠে নামলে ও কারাগারে না গেলে বিএনপির আন্দোলন নতুন মাত্রা পেত। সেই হিসাবে সফলতাও আসতো। তার বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়া একটি বৈঠকেও আপত্তি তুলেছিলেন। খোকা ও সালামের প্রতি উষ্মাও প্রকাশ করেন। এরপর খোকার সমঝোতার ভিত্তিতে বিএনপির মহানগর কমিটি থেকে সরে যান। দল থেকে মির্জা আব্বাসকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে কথা হলে তিনি সম্মত হন। এরপর দায়িত্ব দেওয়া হয় মির্জা আব্বাস ও হাবিবুন নবী সোহেলকে। কিন্তু তাতেও সাফল্য আসেনি। আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে খোকার সময় ও আব্বাসের সময় পার হয়েছে। এই অবস্থায় ঢাকায় বিএনপির সাফল্য আসা সম্ভব হচ্ছিল না। ২০০৯ -২০১২ পর্যন্ত বিএনপি তেমন আন্দোলনে ছিল না। তবে ২০১৩-২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে বিএনপি। কিন্তু সারাদেশে আন্দোলন সফল হলেও ঢাকায় আন্দোলনের সাফল্য ছিল না। এছাড়াও ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিএনপির ঢাকায় কোনো সাফল্য নেই।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর এর পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসার ও সমঝোতারও চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকারও চাইছে। সরকারের সঙ্গে সমঝোতা না হলে আন্দোলনে যাবে সেই প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। তা করতে হলে ঢাকার বাইরে বিএনপি সংগঠিত হলেও ঢাকায় সংগঠিত হতে না পারলে আবারও বিএনপির আন্দোলনের কাক্সিক্ষত সাফল্য আসবে না। সেই সব বিবেচনা করেই বিএনপি ঢাকা মহানগরের ব্যাপারে মনোযোগ দিয়েছে। খোকা ও আব্বাসের গ্রুপিং থেকে রক্ষা করে আলাদা করে দুটি ভাগে ভাগ করে নতুন করে সাজাচ্ছে। আশা করছে তারা ঢাকা মহানগরের সবগুলো কমিটি তৈরি করবে।
লন্ডন থেকে তারেক রহমানের ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, হাবিবুন নবী সোহেল সাংগঠনিকভাবে দক্ষ। কিন্তু সেইভাবে দক্ষতা দেখাতে পারছিল না তার স্বাধীনতা তেমনভাবে না থাকায় ও মূল দায়িত্বে না থাকার কারণে এখন তাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাতে তিনি ঢাকার একটি অংশকে সংগঠিত করার জন্য সব ব্যবস্থা নিতে পারবেন ও সেইভাবে দলের থানা কমিটিগুলো করতে পারবেন। আবার আব্দুল কাইয়ূমও দক্ষ, তিনিও পারবেন। যদিও তিনি এখন বিদেশে। কিন্তু তাতেও সমস্যা হবে না।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা মনে করছেন, আগামী দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নবগঠিত ঢাকা মহানগর বিএনপির দুই কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সফল হবে। এছাড়াও তারুণ্যনির্ভর কমিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নেত্রীর (খালেদা জিয়া) তত্ত্বাবধানে একটি সত্যিকার অর্থে ভালো কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেই কমিটিতে পরীক্ষিতদের স্থান দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেসব পদ এখনো শূন্য আছে সেখানেও কাউকে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
বিএনপির মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকার একটি নীলনকশা নিয়ে এগুচ্ছে, নীলনকশার ষড়যন্ত্র চলছে কাজ করতে না দেওয়ার জন্য। নির্বাচনটা এখন জরুরি। সেই নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে। আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আশা করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবেন। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মনে করছেন, যারা কমিটিতে আছেন এবং যারা বাদ পড়েছেন সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। নতুন কমিটি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন বলেও তারা আশাবাদী।
উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন ঢাকা মহানগরকে দুইভাগে ভাগ করে দেওয়া কমিটি অনুমোদন করেছেন। সেখানে দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও কাজী আবুল বাশার। সিনিয়র সহ-সভাপতি শামছুল হুদা, যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর রবিন, সাইফুল ইসলাম পটু, রফিকুল ইসলাম রাসেল। ৭০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি করা হয়েছে।
উত্তরের সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম। সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল বাসিত আনজু, সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেন। ৬৬ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি করা হয়েছে।