নতুন কমিটি প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে : সোহেল ‘ঢাকা মহানগরকে বিভক্ত করে বিএনপির নবগঠিত কমিটি সফল হবে’
শাহানুজ্জামান টিটু ও কিরণ সেখ : অবশেষে দুই বছর আট মাস পর ঢাকা মহানগরকে দুই ভাগে ভাগ করে নতুন কমিটি দিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার মধ্যরাতে কমিটি ঘোষণার পর পরদিন ঘোষিত এই কমিটি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আগামী দিনে নবগঠিত ঢাকা মহানগর বিএনপি কমিটি সফল হবে। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মহানগর বিএনপির কমিটি হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নেত্রীর (খালেদা জিয়া) তত্ত্বাবধানে একটি সত্যিকার অর্থে ভালো কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে পরীক্ষিত সৈনিকদের স্থান দেওয়া হয়েছে।
মহানগর দক্ষিণের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেছেন, সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী দিনে আন্দোলন করা হবে। নতুন কমিটি নিয়ে যে প্রত্যাশা তা পূরণ করতে আমরা সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর কমিটি নিয়ে বিএনপিতে ক্ষোভ বা দুঃখ থাকবে না। তিনি বলেন, যারা কমিটিতে আছেন এবং যারা বাদ পড়েছেন সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। সবাইকে নিয়েই আগামী দিনে জনগণের প্রত্যাশিত আন্দোলন করা হবে।
ঘোষিত এই কমিটি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, কমিটির অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, যে সমস্ত পদ এখনো শূন্য আছে সেখানেও কাউকে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
এর আগে মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঢাকা মহানগর বিএনপিকে ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ দুভাগে বিভক্ত করে নগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঢাকা দক্ষিণের ৭০ সদস্যের ঘোষিত নতুন কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক কমিশনার ও কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারকে।
এছাড়া ৬৪ সদস্যের মহানগর উত্তরের কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকা-ের আসামি কাইয়ুমকে। তিনি বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে পল্লবী এলাকার সাবেক কমিশনার আহসানউল্লাহ হাসানকে।
কমিটি ঘোষণার পর গতকাল দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন মহানগর বিএনপির দক্ষিণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সোহেল দলের মহাসচিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেখান থেকে বের হয়ে সোহেল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, অতীতের আন্দোলনে আমরা ব্যর্থ হয়েছি কখনোই বলিনি। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছি। অবশ্যই যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং দেশের ১৬ কোটি মানুষের যে প্রত্যাশা তা পূরণ করতে কাজ করবে ঢাকা মহানগর বিএনপি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণে সাদেক হোসেন খোকা ও আব্দুস সালামের নেতৃত্বাধীন মহানগর কমিটি ভেঙে দেয় বিএনপি। এরপর একই বছর ১৮ জুলাই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক করে ৫২ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাদের। কিন্তু নানা অজুহাতে শেষ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি আব্বাস ও সোহেল।
এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি করা হয়েছে ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকা-ের আসামি কাইয়ুমকে। গুলশান-বাড্ডা এলাকার এই সাবেক কমিশনার প্রায় দুই বছর ধরে লোকচক্ষুর অন্তরালে। তিনি বিদায়ী মহানগর আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে গুলশানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে তাভেল্লা নিহত হওয়ার পর এই হত্যাকা-ের তদন্তে কাইয়ুমের নাম আসার পর থেকে তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তার ভাই আব্দুল মতিন এই মামলায় কারাগারে।
দক্ষিণের কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে রাখা হয়েছে ২৬ জনকে। এরা হলেনÑ শামসুল হুদা, ইউনুস মৃধা, নবী উল্লাহ নবী, মীর হোসেন মীরু, আবু মোতালেব, নাসিমা আখতার কল্পনা, ফরিদ উদ্দিন, সাজ্জাদ জহির, মোস্তাফিজুর রহমান হিরু, গোলাম হোসেন, আনভীর আদেল খান বাবু, আরিফুর রহমান আরিফ, ইশরাত মির্জা, মোশাররফ হোসেন খোকন, আতিক উল্যাহ আতিক, মীর আশরাফ আলী আজম, মো. মোহন, জয়নাল আবেদীন রতন, আব্দুল লতিফ, সিরাজুল ইসলাম, হাজী দেলোয়ার হোসেন, আবুল হাসান ননি তালুকদার, হামিদুর রহমান হামিদ, এসকে সেকান্দার কাদির, সাব্বির হোসেন আরিফ ও নিতাই চন্দ্র ঘোষ।
এই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক রয়েছেন তিনজন তারা হলেন, তানভীর আহমেদ রবিন, সাইফুল ইসলাম পটু ও রফিকুল ইসলাম রাসেল। এছাড়া সাঈদুর রহমান মিন্টুকে দফতর সম্পাদক ও আব্দুল হাই পল্লবকে প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে । আংশিক ঘোষিত এই কমিটিতে ১৯ জন যুগ্ম সম্পাদক এবং ১৮ জন সহ- সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন।
অপরদিকে উত্তরের কমিটিতে সহ-সভাপতি ২৩ জন। এরা হলেনÑ মুন্সী বজলুল বাসিত আনজু, আব্দুল আলী নকি, মো. সাহাব উদ্দিন, মোয়াজ্জেম হোসেন, মশিউর রহমান মশু, আতিকুল ইসলাম মতিন, আলী ইমাম আসাদ, মাসুদ খান, ফয়েজ আহমেদ ফরু, কাজী হযরত আলী, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, নবী সোলায়মান, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, এ এল এম কাওসার আহমেদ, রবিউল আউয়াল, আলতাফ উদ্দিন মোল্লা, শামসুল হক, এসএম আনোয়ার হোসেন, আবুল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, আবুল হাশেম, শাহিনুর আলম মারফত ও আক্কেল আলী।
সাংগঠনিক সম্পাদক তিনজন হলেন আক্তার হোসেন, সৈয়দ মনজুর হোসেন মঞ্জু ও সোহেল রহমান।দপ্তর সম্পাদক এ বি এম আবদুর রাজ্জাক, প্রচার সম্পাদক ভিপি হানিফ ও প্রকাশনা সম্পাদক মশিউর রহমান বাবু। কোষাধ্যক্ষ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। এছাড়া ১৩ জনকে যুগ্ম সম্পাদক ও ১৯ জনকে সহ-সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের অনুমোদিত নির্বাহী কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে বলে বিএনপির পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সম্পাদনা : এনামুল হক