মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে
এখনো অধিকাংশ মানুষের কাছে হিলারি ক্লিনটনের পরাজয়টি এক দুঃস্বপ্নের মাঝে চিত্রিত। কেননা তার বিজয়টি ছিল অতি কাক্সিক্ষত। সে কারণে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়টি অনেকের স্বপ্নকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছে। আনুষ্ঠানিক ফলাফলে ২ দশমিক ১ শতাংশ ‘পপুলার ভোট’ বা জনপ্রিয় ভোটের ক্ষেত্রে ২৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭৫টি বেশি ভোট পেয়েও হিলারি হেরেছেন। তাতে হিলারি ৬ কোটি ৫৮ লাখ ৪৪ হাজার ৯৫৪ এবং ট্রাম্প ৬ কোটি ২৯ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭৯ ভোট পান। কিন্তু পরাজয়টা ঘটেছে ‘সুয়িং স্টেট’ বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যভিত্তিক পপুলার ভোটের বিজয়ে অর্জিত বিধিবদ্ধ ‘ইলেকটোরাল’ ভোটে। সেখানেই ট্রাম্পের বিজয় উত্থান ঘটেছে। সেই আপাতদৃষ্টির বিশ্লেষণটি সবাই জানলেও কৌতূহল উঁকি দিচ্ছে অন্যত্র। তাতে নির্বাচনের ঠিক আগে ‘ইমেইল স্ক্যান্ডাল’ নিয়ে এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির পুনর্তদন্তের উদ্যোগ কিংবা রাশিয়ার ‘সাইবার অ্যাটাক’ বা কূটনীতিক ষড়যন্ত্রটি বেশ আলোচিত হচ্ছে। এরপরও প্রার্থী হিসেবে হিলারি ক্লিনটন কতটা নির্বাচনি প্রচারণার উপযোগিতা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন, সেটাই প্রতিপাদ্য হয়েছে ব্লুমবার্গ নিউজের ওয়াশিংটন ব্যুরো প্রধান জোনাথন অ্যালেন ও ‘দ্য হিল’ পত্রিকার হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি অ্যামি পারনেসের সদ্য প্রকাশিত ‘শ্যাটার্ড’ বা চূর্ণ-বিচূর্ণ গ্রন্থে।
এই দুই সাংবাদিক তাদের রচিত গ্রন্থে তুলে ধরেছেন ওই চূর্ণ-বিচূর্ণ দুঃস্বপ্নের কথা। এতে হিলারির নির্বাচনি প্রচারণায় উপর থেকে নিচ পর্যায়ের সংশ্লিষ্টদের কথোপকথনে মুখ্য সিদ্ধান্ত ও সুযোগের সদ্ব্যবহারকে তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে প্রতিঘাতের দাহ এবং সংকটের মুখোমুখিতে ও বিজয়ন্মুখ পরিস্থিতিতে অনাকাক্সিক্ষত বিপর্যয়।
লেখকদ্বয় যে কেবল এই অভিজ্ঞতাকেই তাদের লেখনীতে তুলে ধরেছেন তাই-ই নয়, বরং নির্বাচনের আগে ২০১৫ সালে প্রকাশিত তাদের রচিত অপর গ্রন্থ ‘এইচআরসি’র পুরনো অভিজ্ঞতাটিও সেখানে কাজে লাগিয়েছেন। তাতে নির্বাচনি বৈতরণীতে হিলারির প্রতিকূলতা অতিক্রম, ভোটারদের উপর আধিপত্য বিস্তার এবং ডেমোক্রেট দলীয় বার্নি স্যান্ডার্সের বিপক্ষে নিজের জনপ্রিয়তার মাপকাঠিটিও বিবেচিত হয়েছে।
ফলে ‘শ্যাটার্ড’ গ্রন্থটি ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের পরাজয়ের অবিস্মৃত অধ্যায়গুলোকে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে মূল্যায়ন করেছে। এক কথায়, যে নির্বাচনের ফলাফলে গণমাধ্যমে ‘পোস্টট্রুথ’ বা ‘সত্যোত্তর’ শব্দের ব্যুৎপত্তি, সেটাই দেড় বছর পর লেখকদ্বয় তাদের ‘ফোরবডিং সাইনস’ বা অমঙ্গলের আত্মোপলব্ধিতে বিধৃত করেছেন, যেমনটা টাইটানিক জাহাজটা তার গন্তব্যে পেঁছৗার আগেই নিমজ্জিত হয়েছে।
ইমেইল: নঁশযধৎর.ঃড়ৎড়হঃড়@মসধরষ.পড়স