সব হারিয়ে স্বাস্থ্য হুমকিতে হাওরবাসী
নুর উদ্দিন, ছাতক (সুনামগঞ্জ) : হাওরের দূষিত পানির মাছ খেয়ে ও বাতাসে পচা ধান এবং মরা মাছের দূষিত গন্ধে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে হাওরপাড়ের মানুষের। এতে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।
চৈত্র মাসের শেষের দিকে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ১ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে যায়। ধান পচে অ্যামোনিয়া গ্যাস সৃষ্টি হয়ে বিষক্রিয়ায় হাওর, খাল-বিলের ছোট-বড় মাছ মরে ভেসে উঠে। ফসল ও মাছ মরে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার পর, এখন হাওরের বিষাক্ত পানি ও মরা মাছ খেয়ে মারা যাচ্ছে হাঁস।
গত ৬দিন মাছের মড়ক সামলে উঠতে না উঠতে গৃহপালিত হাঁস মরতে শুরু করেছে হাওর এলাকায়। একদিকে ধান গাছ পচে বিষাক্ত অ্যামোনিয়া মেশা পানি অন্যদিকে মরা মাছ খেয়ে হাঁসগুলো মারা যাচ্ছে। একের পর এক ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হাওরাঞ্চলের মানুষ।
পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের খামারি নুসরাত হাঁসের ফার্মের মালিক আবুল কাশেমের প্রায় ৪ হাজার হাঁস মাত্র ২ ঘণ্টার ব্যবধানে মরে যায়। এতে প্রায় ৭ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়। ধর্মপাশার বাদেহরিপুর গ্রামের রবিউর রহমানের খামারে হাঁস ছিল দেড় হাজারের মতো। ৩দিনে হাওরের বিষাক্ত পানিতে পচা মাছ খেয়ে অসুস্থ হয়ে ১৫০টি মারা গেছে। তবে আতঙ্কের বিষয়, যেকোনো হাঁস আক্রান্ত হওয়ার একদিনের মধ্যেই মারা যায়। একই উপজেলার সরিষাকান্দা ইসলামপুর গ্রামের খামারি আল আমিনেরও একই অবস্থা। আল আমিনের সাড়ে ৭০০ হাঁসের মধ্যে গত ৩দিনে ৯০টির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে হাঁস মরে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কামরুল ইসলাম জানান, হাওরের দূষিত পানি ও মরা মাছ খেয়ে এসব হাঁস মারা যাচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা বলেন, পরিবারের লোকজনদের নিয়ে কি খাব এবং কিভাবে চলব আমরা বুঝতে পারছি না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শঙ্কর রঞ্জন দাস বলেন, জেলার হাওরগুলোতে বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাসে ৪৫ মেট্রিকটন পরিমাণ দেশীয় প্রজাতির মাছ মারা যায়। যার বাজার মূল্য ৯০ লাখ টাকা। মাছের মড়ক রোধ করতে ক্ষতিগ্রস্ত হাওরে চুন ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাছ ধরা ও মরা মাছ না খাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে কিছু হাঁস মারা গেছে। খামারিদের এ সময় হাঁস হাওরের পানিতে না ছেড়ে ঘরে রেখে পালন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । তিনি আরো জানান, জেলায় মোট ২৫ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৩টি হাঁস ও ২ হাজার ৭০৭টি হাঁসের খামার রয়েছে। সম্পাদনা: মুরাদ হাসান