ঝিনাইদহে জঙ্গি আস্তানার ৫টি বোমা নিষ্ক্রিয়, বিস্ফোরক ও অস্ত্র উদ্ধার ৫ ঘণ্টায় সমাপ্ত ‘অপারেশন সাউথ-প’
মাসুদ আলম ও সুলতান আল একরাম (ঝিনাইদহ) : ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের জঙ্গি আস্তানার অভিযান ‘অপারেশন সাউথ-প’ শেষ হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিট থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান শেষ হয় দুপুর ২ টায়। অভিযান চলাকালে বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করা হয় ৫টি শক্তিশালী বোমা।
অভিযান শেষে বেলা ৩টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ বলেন, জঙ্গি আস্তানা থেকে ২০টি কেমিক্যাল ভর্তি কন্টেইনার, ১০০ প্যাকেটটি লোহার বল, ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ৯টি সুইসাইডাল বেল্ট, বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রিক সার্কিট, ১৫ টি জিহাদী বই, ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৭ রাউন্ড গুলি, ১টি মোটরসাইকেল, ১টি চাপাতি, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, ৬টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট ও ২টি বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। পলাতক বাড়ির মালিক আব্দুল্লাহ ও তার স্ত্রী ফাতেমা ওরফে রুবিনাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
ডিআইজি আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে যে পরিমাণ বিস্ফোরক ও সার্কিট উদ্ধার করা হয়েছে তা দিয়ে বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরি করা যেতো। এটি নব্য জেএমবির বোমা তৈরির কারখানা। অভিযানের আগে থেকেই পলাতক রয়েছে বাড়ির মালিক আব্দুল্লাহ। সে ও তার স্ত্রী ফাতেমা ওরফে রুবিনা নব্য জেএমবির সদস্য। এদেশের শতভাগ মানুষ জঙ্গিবিরোধী। জঙ্গিরা যাতে ভবিষ্যতে মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। জনগণকে নিয়ে এদেশ থেকে জঙ্গি নির্মূল করবো।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে পোড়াহাটি গ্রামের নও মুসলিম আব্দুল্লাহ’র বাড়িটি ঘিরে রাখে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা। পরে বৈরী আবহাওয়া ও বোমা ডিস্পোজাল ইউনিটের সদস্যরা না আসায় রাতে অভিযান চালাতে পারেনি তারা। ঢাকা থেকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বোমা ডিস্পোজাল ইউনিটের সদস্যরা শনিবার সকালে ঝিনাইদহে পৌঁছালে সকাল সোয়া ৯টা থেকে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অভিযান চলাকালে ওই বাড়ির ৫শ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। সে সময় নিরাপত্তার কারণে ওই এলাকার বাসিন্দাদের ঘরের বাইরে থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। টানা ৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের অভিযানে ৫টি শক্তিশালী বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়। প্রচ- শব্দে কেঁপে উঠে এলাকা। আতংকিত হয়ে পড়ে ওই এলাকার মানুষ। অভিযানে কাউন্টার টেরোরিজমের ৩০ জন, খুলনা রেঞ্জের পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৪০০ সদস্য এই অভিযানে অংশ নেন।
প্রতিবেশি চাঁদ আলী ও ইউসুফ আলী বলেন, আব্দুল্লাহ গত ৫ বছর আগে সনাতন ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এরপর পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল লতিফের মেয়েকে বিয়ে করে। আব্দুল্লাহর বাড়িতে কেউ যেতো না। মাঝে মধ্যে অচেনা কিছু লোক মোটরসাইকেল নিয়ে আসা যাওয়া করতো। আব্দুল্লাহর স্ত্রী ফাতেমা ওরফে রুবিনা কারও সাথে কথা বলতো না। মুখ সব সময় কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতো। সম্পাদনা: এনামুল হক